আমি লজ্জিত, আমি পুরুষ

বাহিরের কাজ সেরে পাড়ার রাস্তা ধরে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। আমার ঠিক বিশ পঁচিশ কদম সামনে একজন মা(২৮ বছর আনুমানিক) তাঁর স্কুল ফেরত বাচ্চা নিয়ে চৌরাস্তার মোড় পেড়িয়ে হাঁটছেন। স্বভাবগত ভাবে পুরুষের হাঁটার গতিবেগ নারীর চেয়ে খানিক একটু বেশি। স্বাভাবিক ভাবে আমি উনাকে পেছন ফেলেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। যেই আমি হাঁটতে হাঁটতে উনার সমান্তরাল হয়ে যাই ঠিক ঐ মূহুর্তে তিনি তার হাঁটার গতিবেগ দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলেন। (সাধারণত একজন পুরুষ অনেক গুলো নারীর মধ্যে তদ্রুপ একজন নারীও অনেক গুলো পুরুষের আনাগোনার মধ্যে অস্বস্তিবোধ করাটাই স্বাভাবিক) ততক্ষণে প্রায় বাসার গেইটে চলে এসেছি। দুটা গেইট খুলে বাসায় ঢুকতে হয়। ১ম গেইট শুধু খিল লাগানো থাকে আর নিরাপত্তার জন্যে ভেতরের গেইটে সবসময় তালা দেয়া থাকে। তবে বাসার সবার কাছেই এই তালার গণহারে চাবি আছে। যাথারীতি আমি ১ম গেইট শেষে ২য় গেইটটা চাবি দিয়ে খুলে প্রবেশ করছি। দেখি সেই স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাটাও আমার পেছনে পেছনে ঢুকবার জন্যে দৌড়ে আসছে। তখন মা ১ম গেইটের আড়ালে দাঁড়িয়ে বলছেন “দাঁড়াও বাবা, আমরা একটু পরে ঢুকবো” আমি জানিনা উনারা একই বাসায় থাকেন আমাদের সাথে। মনে মনে একটু ধাক্কা খেলাম আড়াল দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে বারণ করা দেখে। একটু সৎসাহস নিয়ে বললাম ‘ভিতরে ঢুকবেন? আসেন।” মহিলাটি আর বাইরে আড়ালে দাঁড়িয়ে না থেকে বাসায় ঢুকেন, যাওয়ার সময় ছোট্ট একটা শব্দ থ্যাংকস বলে সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে চলে যান। ওয়েলকাম শব্দটা শত চেষ্টা করেও কণ্ঠনালীর উপরে আনতে পারি নাই। কারণ আমি পুরুষ, আমাকে দেখে নারী অস্বস্তিবোধ করেন, নিজেকে আড়াল রাখেন। ভীষণ লজ্জা পেলাম। ভাবলাম উনারা চোখে-মনে পুষে রাখেন পুরুষ মানেই হিংস্র জন্তুজানোয়ার।

আমি কি তাহলে অনেক নারীর চোখেই হিংস্র জানোয়ার, পুরুষ বলে? কেমন যেন মন খারাপ লাগছে। আমরা পুরুষেরা নিজেদের কোথায় নিয়ে এসে দাড় করিয়েছি? একবারও কি ভেবে দেখেছি। দেশটা হয়তোবা পুরুষতান্ত্রিক, পুরুষদের সব জায়গাতেই অগ্রাধিকার। তাই বলে আমরা যা খুশি তাই করে বেরাতে পারিনা। এই জিনিসটা আমরা ভুলে গেছি। খুব মন খারাপ হয়ে যায় যখন জাতিগত কারণে আমি কারো ঘৃণার পাত্র হয়ে যাই। পুরুষ হিসেবে আমি খুবই লজ্জিত। মায়ের জাতের সম্মান আমরা কখন করতে পারিনি। সত্যি বলতে আমরা বেশির ভাগ পুরুষরা জানোয়ার। কিন্তু সবাই খারাপ না। যদিও ১০০ এর ভেতর ৯০ ভাগ খারাপ থাকলে তাকে খারাপ বলা যায়। যেই মায়ের থেকে আমাদের সৃষ্টি সেই মায়ের জাতিকে ন্যূনতম সম্মান দেয়ার যোগ্যতা নেই আমদের। বড়ই নিকৃষ্ট আমরা।

লেখকঃ একজন লজ্জিত পুরুষ

 

Leave a Comment