খান দেশী ফল, বাড়ান দেহের বল

দেহের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। ফল খেতে কে না পছন্দ করে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ আর অসুস্থ্য রোগী সবার জন্য ফল হচ্ছে মহৌষধ। ভিটামিন, পুষ্টি উপাদান, খনিজ লবণ, খাদ্য শক্তি ইত্যাদি সবচেয়ে বেশী ফল থেকে পাওয়া যা আমাদের কে শারীরিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। দেশীয় ফল সকল শ্রেণীর মানুষের হাতের নাগালে।
নিচে কয়েকটি দেশীয় ফলের নাম ও গুনাগুণ বর্ণনা করা হলো –

পেয়ারা

পেয়ারা একটি সহজলভ্য ফল। সাধারণ এই ফলকে আমরা অবহেলা করি। কিন্তু এর গুনাগুন উপকারিতা জানার পর আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।

পুষ্টিগুণ

পেয়ারা একটি ভিটামিন-সি আর ময়েশ্চারসমৃদ্ধ ফল। এর উচ্চমাত্রার ভিটামিন-এ ও ‘সি’ ত্বক, চুল ও চোখের পুষ্টি জোগায়, ঠান্ডাজনিত অসুখ দূর করে।

রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার ভূমিকা

ডায়াবেটিকের ঝুঁকি হতে রক্ষা করে, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, রক্তচাপ কমায়, ট্রেস উপাদান কপার সমৃদ্ধ, ম্যাঙ্গানিজের ঐশ্বর্য, স্নায়বিক আরাম, রক্ত পরিষ্কার করে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ওজন কমায়, চুল ভালো রাখে। পেয়ারায় রয়েছে ক্যারটিনয়েড, পলিফেনল, লিউকোসায়ানিডিন ও অ্যামরিটোসাইড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

আম
এই ফলটির নাম শোনার পর জিহ্বায় পানি আসে না এমন মানুষ খুবী কম আছে। আর স্বাদের কথা নাই বা বললাম। অনেকে আম কে জাতীয় ফল হিসেবে ধরে। মধুময় ফলটি শুধু মাত্র স্বাদে নয় গুনেও অনেক ভরপুর।

আম
পাকা আমে ভিটামিন ‘এ’ থাকে

পুষ্টিগুণ
পাকা আমে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমের ১০০০-১৫০০ আইইউ ভিটামিন ‘এ’ থাকে। আর ভিটামিন ‘এ’ অভাবে চোখের নানা রোগ, অন্ধত্ব, খসখসে চামড়া, হজমে সমস্যা, চুলপড়া ইত্যাদি দেখা দেয়। এছাড়াও ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, প্রচুর খাদ্য শক্তি এবং ক্যলসিয়াম এসব প্রচুর পরিমাণে আম থেকে পাওয়ায় যায়।
রোগ প্রতিরোধে আম
আমে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও স্তন, লিউকেমিয়া ও কোলন সহ প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। আমে অনেক বেশী এনজাইম পাওয়া যায়। আমরা অনেকে জানি আম ওজন বাড়াতে সাহায্য করে আর ওজন বাড়াতে বেশী আম খেতে হবে। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো আম খেলে ওজন বাড়লেও কোলেস্টোরল কমে যায়। আমে আছে অনেক বেশী ভিটামিন ‘সি’, ফাইবার ও ফলের শাঁস যা রক্তে বিদ্যমান খারাপ কোলেস্টোরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। আম ত্বকের জন্য অনেক বেশী উপকারী। ত্বককে ভিতর ও বাহির থেকে সুন্দর রাখে, ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখে যা ব্রন থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে। আম দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রাত কানা রোগ থেকে রক্ষা করে। হজমেও আমের ভূমিকা অনেক বেশী। আম শুধু স্বাদের দিক থেকে সুস্বাদু নয়, আম স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
কাঁঠাল
কাঁঠাল হচ্ছে আমাদের জাতীয় ফল কিন্তু এ সুস্বাদু ফলের গুনাগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত নই।

কাঁঠাল
বহুগুণে গুণান্বিত কাঁঠাল

পুষ্টিগুণ

পাকা কাঁঠালের প্রতি ১০০ গ্রামে ৯০ কিলোক্যালরি ও খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯। পাকা কাঁঠালের তুলনায় কাঁচা কাঁঠালে ফাইবারের পরিমাণ অনেক গুন বেশী। তাই কাঁচা কাঁঠাল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুব উপকারী। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাঁচা কাঁঠাল বেশ কার্যকরি। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে রয়েছে আমিষ ১ গ্রাম, চর্বি ০.৩ মিলিগ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.১৯৭ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৯৭ আই ইউ, ভিটামিন সি ৬.৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটা বি২ ০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটা বি৩ ০.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.১০৮ মিলিগ্রাম।

রোগ প্রতিরোধে কাঁঠাল
মানব দেহে কাঁঠাল খুব উপকারি এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন রয়েছে। এ ফলে চর্বির পরিমাণ কম থাকে। এতে পটাশিয়াম রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। কাঁঠালে আছে ফাইটোনিউট্রীয়েন্টস যা ক্যান্সার, আলসার এবং বার্ধ্যক্য প্রতিরোধ করে। কাঁঠালে বিদ্যমান শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানুষের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‍্যাডিকেলস সুরক্ষিত রাখে। সর্দি-কাশি সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা করে, টেনশন ও নার্ভাসনেস কমায়।

তরমুজ
তরমুজ এ নামটি শুনলেই যেনো তৃষ্ণার্ত হয়ে যাই আমরা। গরমে শরীর কে ঠাণ্ডা রাখতে তরমুজের ভূমিকা অনেক। আমাদের শরীরের জন্য তরমুজের উপকারিতা অনেক বেশী।

পানি
তরমুজের ৯২ ভাগ পানি

পুষ্টিগুণ
প্রায় ৯২ ভাগ পানি রয়েছে এতে। এ জন্য তরমুজ খেলে পানির পিপাসা মিটে যায়। প্রতি দুই কাপ তরমুজ খেলে দেহে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র ঘাটতি পূরণ হয়। তরমুজে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন১ থাকে যা এনার্জি তৈরিতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধে তরমুজ
তরমুজে ভিটামিন এ আছে যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তরমুজের সবুজ খোসা এবং লাল অংশ উভয়ই ক্যান্সার রোগীদের জন্য খুব উপকারী। তরমুজ অ্যাজমা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমে সহায়তা করে এবং কিডনির কার্য ক্ষমতা বজায় রাখে।

পেঁপে
আরেকটা মজাদার আর খুব সুস্বাদু ফল হচ্ছে পেঁপে। পেঁপের আরেক নাম হলো ‘’পাওয়ার ফ্রুট’’। এতে আছে অনেক রোগের নিরাময় ক্ষমতা।

পেঁপে
পাকা পেঁপে ত্বকে লাবণ্য ধরে রাখে

পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পেঁপেতে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে ১১১০ ইউনিট। তাছাড়া এ ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি ও সি, শর্করা, খনিজ লবণ এবং খাদ্য শক্তি। অন্তত পুষ্টিকর সবজি হিসেবে কাঁচা পেঁপের জুড়ি নেই। আপেলের চেয়ে ১৩ গুন বেশী ভিটামিন সি থাকে পেঁপেতে। পেঁপের মধ্যে বিদ্যমান সাদা আঠায় প্যাপেইন নামক এনজাইম আছে। এই এনজাইম প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধে পেঁপে
পেঁপে তে লাইকোপিন রয়েছে। আর গবেষকদের মতে লাইকোপিন ক্যান্সার প্রতিরোধী। পেঁপে পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করে হজমে সাহায্য করে। ফ্যাট ভাঙতে পেঁপে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। ওজন কমাতে পেঁপের জুড়ি মেলা ভার অনেক সাহায্য করে। প্রতিদিন এক বাটি সিদ্ধ পেঁপে আপনার ওজন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

আনারস
বাংলাদেশে চার ধরনের আনারস চাষ করে যেমন- কুইন, হরিচরণ ভিটা, জায়েন্ট কিউ ও বারুইপুর। সিলেট, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও ঘোড়াশালে এই চার জাতের চাষ সব চেয়ে বেশী হয়। বছরে দুইবার আনারস তোলা হয়ে থাকে। শীত কালের আনারস ছোট ও টক হয়। বর্ষা কালে আনারস বড় ও অনেক মিষ্টি হয়।

পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণ হিসেব করলে বলতে হয় আনারস অতুলনীয়। আনারসে ক্যালসিয়াম,  ভিটামিন এ, বি, সি এবং আরো অনেক প্রকার পুষ্টি উপাদান আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, শ্বেতসার ৬.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ২১ মিলিগ্রাম, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ২, ০.০২ ফসফরাস, ০.১ ভাগ সহজ পাচ্য ফ্যাত, ০.৫ খনিজ পদার্থ, ১২.০ গ্রাম শর্করা, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, লোফ ১.২ মিলি গ্রাম।

রোগ প্রতিরোধে আনারস এর ভূমিকা
খালি পেটে আনারস কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব দূর করে। আনারসে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান। এ ফল শরীরের ব্যথা দূর করার জন্য খুবী উপকারী। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে যা হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সহায়তা করে। এতে অনেক বেশী ভিটামিন সি থাকে যা জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির অনেক অসুখ নিরাময় করে। আনারস খেলে ঠাণ্ডা লাগা, গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিস জাতীয় রোগ গুলো কম হয়। আনারসে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ হাড় ও চুল কে অনেক বেশী শক্তিশালী করে। এ ফল জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। আনারসে ফ্যাট কম, ওজন কমাতে সাহায্য করে।

 

Leave a Comment