চিনি শরীরের জন্য কেন খারাপ?

মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের সকলের খুব প্রিয়। সব মিষ্টি খাবারের প্রধান উপাদান হল চিনি। প্রকারভেদে তার সাথে নানান কিছু যুক্ত থাকতে পারে। মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে মনও ভালো থাকে। এখন কথা হচ্ছে এই খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? আপনি কি জানেন গবেষকরা আমাদের খাদ্য তালিকার তিনটি জিনিসকে সাদা বিষ বলে আখ্যায়িত করেছেন? এর মধ্যে একটি হল চিনি অন্য দুটি হল ভাত এবং লবণ। আমাদের শরীরে চিনি কি ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে আলোচনা করব।

চিনি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়

যেসব খাবার ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা বা হতাশাকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যায়, তাদের মধ্যে চিনি অন্যতম। অধিক মাত্রায় চিনি গ্রহণ গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে, যার ফলে মেজাজ খারাপ হতে পারে। বিরক্তি, অস্থিরতা, অনিয়মিত ঘুম, বৃদ্ধি পেতে পারে।

চিনি আপনার জীবনের আয়ু কমাতে পারে

মাঝেমাঝে আমরা চকলেট, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকি। এ ধরণের খাদ্যগুলো স্বাস্থ্যের ওপর কি পরিমাণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোর একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রতিদিন ২০ আউন্স সোডা পান করা কোষের বয়স ৪.৬ বছর বেড়ে যাওয়ার সমতুল্য, যা সিগারেট স্মোকিংয়ের প্রভাবের অনুরূপ। এই কোষ বয়স্কতার সঙ্গে মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং আমরা ধূমপানকারীদের মত সোডা পানকারীদেরও সতর্ক করব।

চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত রাখবে

আপনি যত চিনি গ্রহণ করবেন আপনার তত ক্ষুধা থাকবে। এক কথায় ক্ষুধা বাড়তে থাকবে। কারণ অতিরিক্ত চিনি লেপটিন প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে আর এই লেপটিনই আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই অধিক চিনি খেলে ক্ষুধা বাড়তেই থাকে।

ওজন বৃদ্ধি করে

চিনি আমাদের ওজন বৃদ্ধি করে এটা তো সকলেই জানি। কিন্তু কি করে হয় এটা সেটা কি জানি? আমাদের শরীরকে চালানোর জন্য শর্করার প্রয়োজন হয়। চিনিতে যে খাদ্য উপাদান আছে তার বেশির ভাগই শর্করা। শরীর যখন কাজ করছে অথবা ব্যায়াম করছে তখন এই শর্করা আমাদের শক্তি দেয়। যতটুকু খরচ না হয় ততটুকু আমাদের শরীরে মেদ হয়ে জমা থাকে। আগেই বলেছি চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত রাখবে। সুতরাং দৈনিক খাদ্যের সাথে আমরা যখন চিনিও গ্রহণ করি তা আমাদের শরীরে জায়গা করে নেয়। ওজন কমাতে চাইলে আজই চিনি পরিহার করুন।

লিভারের কর্মক্ষমতা কমাতে পারে

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস লিভারকে বেশি কাজ করতে বাধ্য করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন অতিরিক্ত কাজের ফলে লিভারের ফাংশনে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

ইনসুলিন নিঃসরণ বেড়ে যায়

অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের একটি তাৎক্ষণিক ফলাফল হচ্ছে ইনসুলিন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া। ইনসুলিন আমাদের শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। হার্ভার্ড টি.এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা বিজ্ঞানী ভাসন্তি মালিক বলেন, “সোডা হচ্ছে সর্বাধিক জঘন্য কালপ্রিট। বেভারেজের শর্করা খুব দ্রুত শোষিত হয়, যার ফলে রক্ত শর্করা ও ইনসুলিন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের দিকে ধাবিত করে যেখানে শরীর সক্রিয় হতে অত্যধিক ইনসুলিন প্রয়োজন হয় এবং ব্যক্তির বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।”

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

গবেষণায় দেখা গেছে, চিনির সঙ্গে উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুর সংযোগ আছে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, “উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণের সঙ্গে লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (ভিএলডিএল) নামক একপ্রকার রক্তের লিপিড বৃদ্ধির সংযোগ পাওয়া গেছে, যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। চিনি এইচডিএল নামক উপকারী কোলেস্টরল হ্রাস করতে পারে- এইচডিএল কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।”

মস্তিষ্ককে প্ররোচিত করে

চিনি আপানার মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, শক্তিসমৃদ্ধ মিষ্টান্ন খাবার আপনার লিম্বিক সিস্টেম নামক মস্তিষ্কের অংশকে এসব খাবার আরো বেশি করে খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে।” মিষ্টান্ন খাবার খেলে এসব খাবার চাওয়া ও খাওয়ার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ পায় এবং এভাবে এসব খাবার খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডা. মালিক বলেন, “চিনি মস্তিষ্কের প্লেজার সেন্টারকে উদ্দীপিত করতে পারে, যেভাবে করে ড্রাগ।”

দাঁতের ক্ষয় করে

ডা. স্যান্ডা মোল্ডোভান বলেন, “মুখের ব্যাকটেরিয়া চিনি ভালোবাসে, যেমনটা ভালোবাসি আমরা এবং তারা যখন এসব ভোজন করে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এসিড নিঃসরণ হয়। এই এসিড দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে ও ডেন্টিন নামক দাঁতের গভীর স্তরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে” ব্যাকটেরিয়ার জন্য আপানার মুখে দুর্গন্ধও হতে পারে। আপনি যত বেশি চিনি খাবেন, আপনার মুখ তত বেশি অ্যাসিডিক হবে এবং দ্রুত দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষয় হবে। এছাড়া চিনি খেয়ে ইস্টও বিকশিত হয়, যা মুখের কর্নার বা জিহ্বা লাল করতে পারে।

 

Leave a Comment