ডায়বেটিস রোগীরা কিভাবে খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন?

ডায়াবেটিস রোগটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে অনেকাংশে নির্ভর করে। ডায়াবেটিস- এ আক্রান্ত রোগীদের হৃদ রোগজনিত সমস্যা, মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা– নন ডায়াবেটিক এর থেকে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাইপ–২ ডায়বেটিস অর্থাৎ যাতে ইনসুলিন লাগেনা, শুধুমাত্র ওষুধে চিকিৎসা দেয়া হয়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এমন না যে, আপনার পছন্দের খাবার থেকে নিজেকে দূরে থাকতে হবে। সব খাবারই খাওয়া যাবে, কিন্তু পরিমিত মাত্রায় যাতে আপনার মুড ও শক্তির সমন্বয় ঘটে।

যাদের ডায়বেটিস আছে তারা অনেক কিছুই খেতে পারেন না। নিজের অনেক পছন্দের খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। এমন হলে হলে সত্যি জীবন যাপন করা কঠিন।

ডায়বেটিস রোগীদের কি খাবার বর্জন এবং কি খাবার গ্রহণ করা উচিত তা নিয়েই আজ কথা বলব।

ডায়বেটিস হলে কি মিষ্টি খাবার বাদ দিতে হবে?

ডায়বেটিসের জন্য আপনার প্রিয় মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম পরিহার করতে হবে তা না। আপনাকে পরিমাণ মত খেতে হবে। আগে যেমন ইচ্ছে হলেই ২/৩ টা রসগোল্লা অথবা ১ বাটি পায়েস খেয়ে ফেলতেন এখন তেমনটা হবে না। মিষ্টি দই খাওয়ার সময়ও আপানাকে স্বাস্থ্যের কথা মনে রাখতে হবে। মনে রাখবেন বেহিসাবি যেকোনো কিছুই আমাদের শরীরের জন্য খারাপ।

ডায়বেটিস হলে শর্করা গ্রহণ

পাউরুটি, সাদা ভাত, পাস্তা ইত্যাদি স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার এর বদলে বার্লি, বাদামি বা লাল চালের ভাত, গম বা গম জাতীয় শস্য দানা ভুক্ত খাবার থাকে।  কারণ শস্য দানা জাতীয় খাবার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে। গোল আলুর পরিবর্তে মিষ্টি আলু খেতে পারেন।

শর্করার পরিমাণ যেন কখনো বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য গ্রহণ করুন।

ডায়াবেটিক খাবার

আপনি ডায়াবেটিক বা নন ডায়াবেটিক হন না কেন, দামি ও স্পেশাল ডায়াবেটিক খাবার খুব একটা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারেনা।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনলেই আপানার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

যা যা বেশি খাবেন-

  • দেশী মাছ ও মুরগি
  • উপকারী চর্বি যেমন, বাদাম, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদি।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার– যেমন, ডিম, অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই ইত্যাদি।
  • টাটকা ও রঙিন শাকসবজি, জুসের থেকে ফল বেশি খেতে হবে।

যা যা কম খাবেন-

  • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার এবং অতিরিক্ত রান্না করা খাবার
  • প্যাকেটজাত ফাস্ট ফুড, বিশেষ করে যাতে চিনি, বেকিং করা খাবার, মিষ্টি, ডেজারট, চিপস ইত্যাদি থাকে।
  • সাদা পাউরুটি বা রুটি
  • প্রক্রিয়াজাত মাছ বা মাংস

নিয়মিত খাবার গ্রহণ খাবারের তালিকা প্রস্তুতি

মজার ব্যাপার এই যে মাত্র ৭% শরীরের ওজন কমালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অর্ধেক কমে যায়। এর জন্য অতিমাত্রার সচেতনতার দরকার নেই। শুধুমাত্র নিয়ম করে খাবার গ্রহণ ও কি খাচ্ছেন তার তালিকা প্রস্তুত বা সচেতন হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

ডায়বেটিস

  • দিনটি শুরু করুন সুসাস্থ্যকর নাস্তা দিয়ে– এটি সারাদিনের শক্তি যোগাবে পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়মিত রাখবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালের নাস্তা হিসেবে ২/৩ পিস লাল আটার রুটি, ১ টি সিদ্ধ ডিম ও পরিমাণ মত সবজি ছাড়াও ১ কাপ দুধ যথেষ্ট।
  • দুপুরের খাবার হিসেবে ১ কাপ ভাত, ১/২ কাপ সবজি, মাছ বা মাংস ১ পিস ও পরিমাণ মত সালাদ যথেষ্ট।
  • রাতের খাবার হিসেবে ২/৩ পিস রুটি, ১ কাপ সবজি ও মাছ বা মুরগি ১ পিস যথেষ্ট।
  • অল্প অল্প খাবার গ্রহণ– ৬ বারের বেশি খাবেন না। এভাবে খাবার গ্রহণে সহজে হিসেব রাখতে সুবিধা হয়।
  • ক্যলরি নিয়মিতকরন– নিয়মিত চাহিদানুযায়ি খাবার গ্রহণ করুন। কোন এক বেলার খাবার পরিহার করা থেকে বিরত থাকুন। ধরুন রাতে না খেয়ে পরেরদিন সকালে বেশি খেলেন, এটা কাম্য নয়। খাবার পরিহারে রক্তের শর্করার মাত্রার তারতম্য হয়।

Leave a Comment