প্রতি বছরের মত এ বছরও নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন নানা গুণীজনেরা। কম বেশী সবাই জানি এই পুরস্কার সম্পর্কে। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার এবছরের নোবেল বিজয়ীদের তালিকাও মোটামুটি জেনে গেছেন সবাই। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অজানা তথ্য আছে যা আমরা জানি না। সেই সব মজার তথ্য জানার জন্য পড়তে থাকুন আর্টিকেলটি।
বিশেষ এই পুরস্কারের জনক আলফ্রেড নোবেল

আলফ্রেড নোবেল অনেক বিত্তবান একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি শুধু বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একাধারে ছিলন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং সফল শিল্পপতিও। এই ভদ্রলোক মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পাঁচটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। অনেক গবেষণার পর ১৮৬৬ সালে প্রচণ্ড শক্তিধর বিস্টেম্ফারক ডিনামাইট আবিষ্কার করেন। সে সময় বিভিন্ন দেশে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল ধ্বংস করে রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছিল।
ডিনামাইটের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বেশি থাকায় তা রাতারাতি বিশ্বস্ততা অর্জন করে। খুব জলদি বড়লোক হয়ে যান নোবেল। অকল্পনীয় ভাবে বিত্তবান হয়ে যাওয়া নোবেল একসময় অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। নোবেলের জীবদ্দশায়ই জার্মানরাও ব্যাপক হারে ডিনামাইট বোমা নির্মাণ করে শত্রুদের ওপর নিক্ষেপ করেছে। সেই দুঃখবোধ ও বিবেকের যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই তিনি তার অর্থকড়ি ও যাবতীয় সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
এই পুরস্কার প্রদানের জন্যে তিনি তার প্রায় পুরো সম্পত্তি দান করে যান, যার পরিমান ছিল প্রায় ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, এখনকার হিসেবে ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
গনিতে নেই নোবেল পুরস্কার
গনিতে কোন নোবেল দেয়া হয়না। তাদের মতে গনিতের কোন কিছু মানব কল্যাণে অথবা মানব জীবনে কোন বড় ভূমিকা রাখেনা। কোন একটা বিচিত্র কারণে তাঁর মনে হয়েছিল গণিত জিনিসটার তেমন কোন ব্যাবহারিক গুরুত্ব নেই! নোবেলের গনিতবিদ প্রেমিকা তাকে ধোঁকা দিয়েছিল বলে তিনি রাগ করে গণিতে নোবেল প্রাইজ রাখেননি বলে যে গল্প প্রচলিত আছে সেটা ভিত্তিহীন।
নোবেল জয়ী পরিবার

নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে মাদাম কুরির পরিবারের সদস্যরা বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। তাঁর স্বামী পিয়েরে কুরি ছিলেন স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী।
স্ত্রী মাদাম কুরির সঙ্গে ১৯০৩ সালে তিনি রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
এ ঘটনার আট বছর পর ১৯১১ সালে মাদাম কুরি আবার এই পুরস্কার অর্জন করেন।
এবার তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় রসায়ন শাস্ত্রে, বিশুদ্ধ রেডিয়াম পৃথকীকরণের জন্য।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে মাদাম কুরি ছাড়া অন্য কোনো মহিলা বিজ্ঞানী দু’বার পুরস্কার পাননি।
আরও একটি কারণে মাদাম কুরি পরিবারের নাম নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
মাদাম কুরির বড় মেয়ে আইরিন জুলিও কুরি মায়ের মতোই স্বামী ফ্রেডারিক জুলিওর সঙ্গে যৌথভাবে রসায়ন শাস্ত্রে এই পুরস্কার অর্জন করেন।
এখানেই প্রতিভাদীপ্ত এ পরিবারের সাফল্যের শেষ নয়।
মাদাম কুরির কনিষ্ঠ কন্যা ইভ কুরির স্বামী হেনরি ল্যাবোসে ১৯৬৫ সালে নোবেলে শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
ভাবতে অবাক লাগে, এই পুরস্কারটি মাদাম কুরি পরিবারের সদস্যরা যেন নিজস্ব করে নিয়েছিলেন।
মনোনয়ন পেয়েও নোবেল পুরস্কার পাননি যারা

মনোনয়ন পেয়েছেন অনেকবার কিন্তু এই পুরস্কার পাননি এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এদের মধ্যে প্রথমে আসে রুশ ঔপন্যাসিক লিও টলস্টয়ের নাম। ১৯০১ সালে যখন এই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় তখনই তিনি সাহিত্য বিভাগে নোবেল পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯০২ সালেও টলস্টয়কে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়। এরপর আসে মহাত্মা গান্ধীর নাম। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ ও ১৯৪৭ সালে গান্ধীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তার নাম বাদ দেওয়া হয়। এমনকি মহাত্মা গান্ধী মারা যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালেও তাকে পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অথচ সেবারও তাকে পুরস্কারপ্রাপ্তির সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি অনেকবার মনোনীত হওয়ার পরও এই মহামূল্যবান পুরষ্কারটি পাননি ফ্রয়েড।
নোবেল বিজয়ীদের বয়স
নোবেল পুরস্কারের ছ’টি বিভাগ একসঙ্গে ধরলে পুরস্কার জয়ের সময় বিজয়ীদের বয়স দাঁড়ায় গড়ে ৫৯ বছর৷ বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলির ক্ষেত্রে বিজয়ীদের গড় বয়স ৫৭, চিকিৎসাবিদ্যায় আরো কম, ৫৫ বছর। নোবেলের ইতিহাসে তরুণতম বিজয়ী ছিলেন লরান্স ব্র্যাগ, যিনি ১৯১৫ সালে পদার্থবিদ্যায় এই পুরস্কার পান৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর৷ কিন্তু এখন সেই স্থান দখল করেছেন মালালা ইউসুফজাই। যিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে মহামান্য এই পুরস্কার পান। অপরদিকে বিজ্ঞান বিষয়ক নোবেলগুলির ইতিহাসে প্রবীণতম বিজয়ী হলেন ৮৮ বছর বয়সি পদার্থবিদ রেমন্ড ডেভিস জুনিয়র৷ তবে তার চাইতেও বেশি বয়সের মানুষ এই পুরস্কার জিতেছেন, যেমন দুই অর্থনীতিবিদ লেওনিড হুরউইৎস ও লয়েড শেপলি, যাদের বয়স ছিল ৯০ এবং ৮৯৷
এয়ারপোর্টে নোবেলজয়ীর বিপত্তি
২০১১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী ব্রায়ান শ্মিট তার স্বর্ণের পদকটি এয়ারপোর্টের চেকিং থেকে বের করতে বেশ বেগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
ব্রায়ান ডার্ক এনার্জির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারার জন্য এই পদকে ভূষিত হন।
তিনি বলেন, “আপনি যত বড় মাপের পদকপ্রাপ্ত হন না কে, এয়ারপোর্টে আপনার নিস্তার নেই।”
কারাগারে থেকে নোবেলজয়ী
তিনজন নোবেল বিজয়ী তাদের পুরস্কারের খবর জানতে পেরেছিলেন কারাগারে থাকাকালীন সময়ে। এদের প্রত্যেকেই এই পুরস্কার পেয়েছিলেন শান্তি স্থাপনের জন্য।
তাদের তিনজন হলেন জার্মান সাংবাদিক কার্ল ভন অজিটস্কি (১৯৩৫ সাল), বার্মিজ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অং সান সু চি (১৯৯১ সাল) এবং চৈনিক মানবাধিকার কর্মী লিও জিয়াওবো (২০১০ সাল)।
অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন তাঁর এই পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া হোক।
এ বিষয়ে আপনাদের মতামত আশা করছি। ইচ্ছে করলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথেই থাকুন ফিরে আসব নতুন কোন তথ্য নিয়ে।
sab somoy sothik manuske nobel dea hoyni
আপনি একদম ঠিক বলেছেন। যেমন বারাক ওবামা। তাঁকে শান্ত রাখতেই শান্তি পুরুস্কার দেয়া হয়
কেউ আবার পেয়েও নোবেল ফিরিয়ে দিয়েছে