বিশ্বায়নের আরেক নাম তথ্য প্রযুক্তি

একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র বিস্তৃত। বাংলাদেশে দেরিতে হলেও তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বিস্তৃতি লাভ করছে। গবেষণা থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসাব্যবস্থা, ব্যবসা, কৃষি, যোগাযোগসহ, মহাকাশে, মহাসমুদ্রে র্বস্তরে প্রযুক্তির ছোঁয়া। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনের জন্যে তথ্য প্রযুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

তথ্য প্রযুক্তি কি?

বর্তমান যুগে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বা দক্ষ ব্যাবস্থপনার জন্য তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য আহরণ, তথ্য বিতরনের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, আহরণ এবং এর সাথে জড়িত সকল প্রকার কার্যাবলী পরিচালনার বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া হলো তথ্য প্রযুক্তি। বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্বারা একক তার বা একক লিঙ্ক পদ্ধতির মাধ্যমে অডিও-ভিজুয়াল, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও টেলিফোন নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে প্রযুক্তির বহির্প্রকাশ পায়। যার ফলে অনেক বড় অঙ্কের অর্থনৈতিক খরচ কমে যায়।

প্রযুক্তির ব্যবহারের বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর তফাৎ

প্রযুক্তির ব্যবহার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ গুলোর মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই তফাৎ বিদ্যমান বলে জানিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। অর্থনৈতিক ফোরাম এর প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার করে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশী সাফল্য অর্জনকারি দেশ গুলোর তালিকা শীর্ষে রয়েছে সুইডেন, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, অ্যামেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেন। এই তালিকার নিচের দিকে রয়েছে নেপাল, সিরিয়া, পূর্ব টিমর ও হাইতি। প্রযুক্তির ব্যবহারে ইউরোপ অনেক এগিয়ে রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় ভারতকে ছাড়িয়ে চীন উপরের দিকে উঠে এসেছে। এশিয়া মহাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক দিয়ে ভারত ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। তবে চীন সরকার প্রযুক্তিখাতকে অনেক বেশী গুরুত্ব দেওয়ায় ভারতকে টপকে চীন এগিয়ে। ভারত ও চীন এগিয়ে থাকলেও এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। এশিয়ায় পিছিয়ে থাকা দেশ গুলো হলো নেপাল, তাজিকিস্তান ও পাকিস্তান।

বাংলাদেশে দারিদ্রতা বিমোচনে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্রতা কমানো সম্ভব। প্রযুক্তির দ্বারা আমরা অনেক নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারি এবং তা কাজে লাগিয়ে জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন করা সহজ। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি পদ্ধতি এনে দিতে পারে নতুন সম্ভাবনা। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়উপযোগী ও আধুনিক তথ্য, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রযুক্তি ইন্টারনেট, মোবাইল এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হলে তা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রযুক্তি
উন্নতি সাধন

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়নের কৌশল

বাংলাদেশের কৃষি নীতিতে ই-কৃষি অন্তর্ভুক্তকরণ ও প্রত্যেক ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন  এবং তা সঠিক ভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ। কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষিতকরণ, আইসিটি কি সে বিষয়ে ধারণা ও উৎসাহ দেয়া। কৃষি কাজের জন্য ই-কৃষি  কন্টেন্ট তৈরি ও ব্যবহার। কৃষি চ্যানেল সম্প্রচার, ওয়েব টিভি, কৃষিভিত্তিক ওয়েবসাইট ও ওয়েব বেতার চালু করণ। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি কর্মকান্ডের জন্য সরকার কে জোর দেওয়া।
যে দেশ তথ্য ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যত এগিয়ে সে দেশ তত বেশী উন্নত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রযুক্তির ব্যবহারে কারণে বর্তমানে অনেক কঠিন ও সময় ব্যয়বহুল কাজ সহজ এবং খুব কম সময়ে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি বৃদ্ধি, তথ্য আদান-প্রদান (টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদি) প্রযুক্তি ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি এসব প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে উন্নয়নশীল দেশ গুলো খুব তাড়াতাড়ি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

Leave a Comment