বিড়ম্বনার আরেক নাম লোকাল বাস

আমাদের জীবিকার তাড়নায় শহর মুখী হতে হয়। নানান রঙের স্বপ্ন নিয়ে আমরা নিজ স্থানের মায়া ছেড়ে দিয়ে অচেনা অজানা একটা জায়গায় পাড়ি দেই। সেই অজানা জায়গাটার নাম হলো শহর। শহর মানেই হাজারো ব্যস্ততার চাপ, ব্যস্ত জীবন, অনেক কোলাহল, কারো হাতে যেন এতটুকু সময় নেই দাঁড়িয়ে থাকার, সবাই নিজ নিজ কাজ নিয়ে জীবনকে টেনে নিতে থাকে সামনের দিকে। পেছনে তাকানোর মত কারো হাতে সময় নেই এ যেন এক অদ্ভুত জীবন। দিন দিন বাড়ছে শহরমুখী মানুষের ঢল। গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব, শহরে কর্ম ক্ষেত্র আর কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিজের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করে শহরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে মানুষ। দিন দিন শহর মুখী জনসংখ্যা বাড়ার কারণে শহর গুলো অনেক বেশী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ অনুযায়ী দেখা যায় ২০০৯ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের হাড় ছিলো ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, আর সেটি বেড়ে ২০১৩ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২ শতাংশে। সম্প্রতি অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রত্যেক মাসে গ্রাম থেকে ঢাকা প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আসছে। এর কারণে বস্তির সংখ্যা বাড়ছে অনেক বেশী।

অন্য দিকে শহর থেকে গ্রামে পাড়ি জমানো মানুষের হার দিন দিন কমছে। এতে শহরে বাড়ছে বিড়ম্বনা। এমন বিড়ম্বনার আরেক নাম হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। সকাল হলেও শুরু হয়ে যায় সকল কর্ম মুখী মানুষের আরেকটা নতুন দিনের অধ্যায়। শহরের রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। সবাই ছুটে চলতে থাকে যার যার কর্মস্থলে। কর্মজীবী মানুষের প্রত্যেকটা মিনিটের মুল্য অনেক বেশী। কিন্তু এমন মূল্যবান সময়ের মুল্য যেন দিন দিন শেষ হতে চলছে। কারণটা হলো যাতায়াত ব্যবস্থা।

লোকাল বাস
শহরের যান্ত্রিক জীবন

আমাদের কয়জনের সামর্থ্য আছে নিজের গাড়ী নিয়ে অফিসে যাওয়ার? এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাই আমাদের বেশীর ভাগ মানুষকে লোকাল বাস গুলোর প্রতি নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এখানেই সেই ভোগান্তির শুরু। শহরে চলাচলকারী বাস গুলো সিটি বাস নামে পরিচিত। জরাজীর্ণ অনেক দিনের ভাঙ্গা পুরাতন বাস মানেই সিটি বাস। সিটি বাসের সংখ্যা বেশী থাকলেও ভোগান্তির অন্ত নেই। সিটি বাসের নিয়ম হল যাত্রী দাড়িয়ে নেয়া যাবে না। কিন্তু বাসগুলো এখন লোকাল বাসের মতো। আমরা সময়ের কথা চিন্তা করে একই বাসে অনেক মানুষ উঠে পড়ি। কষ্ট হবে জেনেও সময়ের মুল্য দিতে আমাদের তা করতে হচ্ছে। আর এই সুযোগ গুলো কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে বাস মালিকরা। ভাড়ায় অনিয়ম চলছে অনেক বেশী কিন্তু সেবার মান অনেক নিম্ন। সিটি বাস গুলো তে সব চেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মহিলারা। প্রত্যেকটা বাসে নির্দিষ্ট্য সংখ্যক সিট মহিলাদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেটা মেনে চলছে না কেউ। আর এতে করে অনেক বেশী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শহরের বিভিন্ন শ্রেণীর মহিলাদের। অনেক সময় মা বোনদের যৌন হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। পকেটমার এর হার বাড়ছে কারণ একই বাসে অনেক বেশী ভিড় থাকা সুবাধে সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে পকেটমার থেকে শুরু করে লম্পটেরা।

সিটি বাস গুলোর মধ্যে সিটিং সার্ভিস এর নামে চলছে অধিক ভাড়া হাতানোর রমরমা ব্যবসা। নির্দিষ্ট বাস স্টপিস থাকা সত্যেও যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠায় নামায়। নির্দিষ্ট সিটের বাহিরে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো হয়ে থাকে। এতে যাত্রীদের অনেক বেশী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসময় মমতাজের একটি গানের কয়েকটা লাইন মনে পড়ছে-

বন্ধু তুই লোকাল বাস বন্ধু তুই লোকাল বাস
আদর কইরা ঘরে তুলস ঘাড় ধইরা নামাস

উঠানোর সময় তারা ভালোভাবেই উঠান। নামানোর সময় অনেক হেল্পার আছে ধাক্কা দিয়ে নামায়। ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক দুর্ঘটনা। ট্রাফিক আইন মেনে চলছে না অনেক বাস। এতে শহরে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। আর আমাদের মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট হয়ে থাকে। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও অনেক অসাধু সুবিধা লোভী মহলের জন্য কোন কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নিম্ন মানের বাস গুলো বন্ধ করার নিয়ম থাকলেও সে গুলো দিনের পর দিন চলছে। বন্ধ করার নিয়ম চালু করার সময় সব লাইসেন্স বিহীন এবং চলাচল অযোগ্য বাসগুলো লুকিয়ে ফেলা হয়। যেগুলো পুলিশের কাছে ধরা পরে সেগুলো টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনে কিছুদিন পর আবার রাস্তায় চালানো শুরু করে বাস কর্তৃপক্ষ। এসকল অনিয়ম শহরের মানুষ গুলোকে হাঁপিয়ে তুলছে তবুও কিছু করার নেই বলে এভাবেই চলতে হচ্ছে প্রতিদিন। এ নিয়ে থাকছে আরও লেখা। জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

Leave a Comment