ছোটবেলায় ভূতের ভয় দেখিয়ে বাবা-মা ঘরে আটকে রাখতেন অথবা খাবার খাওয়াতেন। বড় হয়ে সেই ভূতের ভয় এখন আর নেই। বিজ্ঞানের আলোয় সেই ভয় এখন আর হয়তো করে না আমাদের। এখন কিছু ভূতুড়ে জায়গা আছে যার কোন ব্যাখ্যা নেই।
এই অসংজ্ঞায়িত জায়গা আর কাহিনী সম্পর্কে আজ কিছু জানব আমরা।
ভূতুড়ে ভাঙ্গার দুর্গ, ইন্ডিয়া
এটি ইন্ডিয়ার রাজস্থানের পাশে অবস্থিত। এখানকার মানুষের মুখে শোনা যায় এই জায়গাটির ওপর নাকি অনেক অভিশাপ আছে। কোন এক পুরনো ঋষি এই জায়গারটির উপর অভিশাপ দিয়েছিল যে যারা এখানে মারা যাবে তাদের আত্মা সারা জীবন এইখানে বন্দি থাকবে।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এখানকার কোন বাড়ির ছাদ নেই আর সব গুলা বাড়ির ছাদ তৈরি করার সময় নাকি সেগুলো ভেঙ্গে পড়ে। সন্ধ্যার পড়ে এখানে যে পর্যটকরা গেছে তারা আজ পর্যন্ত ফিরে আসেনি আর এখনকার সরকার সন্ধ্যার পর সেখানে যেতে পুরোপুরি মানা করে দিয়েছে।
ভূতুড়ে চাঙ্গি বীচ, সিঙ্গাপুর
এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি জায়গা। ‘সোক চিং’ যুদ্ধ সংঘটিত হবার সময় জাপানিরা নিজেদের বিরোধী ভেবে অনেক অনেক নিরীহ চীনা নাগরিককে হত্যা করে।
তারপর তাদেরকে এখানে কবর দেয়া হয় আর সেই থেকে এই জায়গাটি হয়ে ওঠে ভূতুড়ে। এখানে রাত হলে শুরু হয় ভূতুড়ে সব কাণ্ড কারখানা। মনে হয় দূর থেকে কিছু মানুষ কান্না করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।
অনেক পর্যটক কিছু না জেনে এখানে রাতের বেলা ঘুরতে আসে আর ফেরার সময় নিয়ে যায় অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা। এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার খানেক মানুষ এমন কান্নাকাটি শোনার কথা স্বীকার করেছে।
আর স্থানীয় লোকজন কেউ এখানে রাতের বেলা ভুল করেও আসে না।
ওহিও ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ
ইউনিভার্সিটিটি ইউএসএর সবচেয়ে ভূতুড়েদের মধ্যে অন্যতম। এখানে বহু পুরনো পাঁচটি সমাধি আছে যা কিনা একটি পঞ্চভুজ তৈরি করেছে। আর এখানে অনেক পুরনো একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেবার জন্য ল্যাব ছিল যেখানে তাদের ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হতো পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। লোকমুখে শোনা যায় যে সন্ধ্যা হবার পর এখানে নাকি অদ্ভুত চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যায়।
আর ভয়ে সেখানে যেতে কেউই সাহস করেনা।
স্ক্রিমিং টানেল, নায়াগ্রা ফলস
কুখ্যাত ভূতুড়ে জায়গার মধ্যে অন্যতম একটি জায়গা এটি। এখানকার মানুষেরা বলে আপনি যদি এই টানেলের ভেতরে একটি ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালান তবে একটি আগুনের গোলা টানেলের বাইরে চলে যাবে আর আপনি একটি ছোট্ট মেয়ের চিৎকার দেবার আওয়াজ শুনতে পাবেন যা খুবই ভয়ানক।
এখানকার বাসিন্দারা সব সময় সেখানে যেতে মানা করে।
হাইগেট সমাধিক্ষেত্র, ইউকে
এটি ইংল্যান্ডের অন্যতম ভূতুড়ে সমাধিস্থল এখানে রাত হলেই শুরু হয় আজব আজব সব কাজ কারবার। মস্তকবিহিন একটি লাশ একবার কবরের ভেতরে ঢোকে আবার বাইরে আসে। তার সর্বাঙ্গে লতাপাতা জরানো থাকে আর গঠন এক্কেবারে অন্যরকম।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এখানকার তাপমাত্রা বাইরের থেকে অস্বাভাবিক ভাবে কম।
প্রাচীন রাম হোটেল, ইংল্যান্ড
আপনি যদি ভুতের ঘটনার অপর একেবারেই বিশ্বাস না করে থাকেন তবে দেখতে পারেন এই হোটেলটি। এখানে সবসময় কেমন যেন স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ আর কেমন যেন কদাকার একটি গন্ধে ভরে থাকে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই হোটেলটি একটি কবরের উপর তৈরি করা হয়েছে।
আর এখানকার সবারই ধারনা যে এইজন্য এখানকার পরিবেশ এমন ভূতুড়ে।
মন্টে ক্রিস্টো, অস্ট্রেলিয়া
এই বাড়ির মালিক মিসেস ক্রাওলি তার স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তী ২৩ বছরে মাত্র ২ বার বাড়ির বাইরে বের হয়েছিল। এবং তার মৃত্যুর পর আজও নাকি তাকে এই বাড়িতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এই বাড়ির ভেতর থেকে যারা ঘুরে এসেছে তাদের মুখ থেকে এর সত্যতা মেলে। তারা বলে বাড়ির ভেতরে গেলে মনে হয় কে যেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে আবার হুট করে মিলিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন যখন তারা ক্রাওলির ঘরে প্রবেশ করে তখন প্রত্যেকে রূদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির ভেতরে ছিলেন এবং তাদের মনে হচ্ছিলো যেন তাদের সারা গায়ে কেমন রক্তবর্ণে দেখা দিচ্ছে পরবর্তীতে যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে তখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এডিনবার্গ দুর্গ, স্কটল্যান্ড
স্থানীয়দের মতে এই অসাধারণ দুর্গে ভূত দেখা গিয়েছে অনেকবার এবং এখানে যেসব পর্যটক ঘুরতে এসেছে তারাও এই বিষয়টি স্বীকার করেছে।
জানা যায় ফরাসি যুদ্ধ চলার সময় এখানে বহু বন্দীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে এই জায়গাটি হয়ে ওঠে অভিশপ্ত।
ডোমিনিকান হিল, ফিলিপাইনস
সবাই বলে এখানে নাকি যুদ্ধের সময় যারা আহত হতো তাদের চিকিৎসা দেয়া হতো আর চিকিৎসারত অবস্থায় যারা মারা যেত তাদের এখানেই কবর দেয়া হতো। পরবর্তীতে জায়গাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এখানকার মানুষেরা বলে রাত হলে নাকি এখান থেকে সব অদ্ভুত রকমের শব্দ পাওয়া যায়। কখনো গুলির শব্দ, কখনো মানুষের বাঁচার জন্য আর্তনাদ ইত্যাদি।
ভয়ে এখানে কেউ আসে না। আর যারা টুরিস্ট আসে তারা দূর থকে দেখেই চলে যায়।
বেরি পোমেরয় দুর্গ, টোটনেস
এই জায়গাটি যতটা সুন্দর ততটাই ভয়ংকর, এমনটা শোনা যায় প্রায় চৌদ্দ শতক আগে এখানে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। কিংবদন্তী অনুসারে, হোয়াইট লেডি হলেন মার্গারেট পোমেরয়ের আত্মা যিনি বন্দি অবস্থায় অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন আর তাকে বন্দি করেছিল তারই হিংসুটে বোন।
এই দুর্গের অনেক জায়গায় তাকে ঘুরতে দেখা যায়। এবং অনেকেই এই অভিযোগটি করেছেন।
বিদেশী ভূতের গল্প তো অনেক শুনলেন। এবার আসুন আমাদের দেশীয় কিছু ভূতুড়ে জায়গার কাহিনী জেনে আসি।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার আলিয়াপুর নামক গ্রামে নাকি প্রতি আমাবস্যায় রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একদল কুকুর দলবেঁধে গ্রামটি ঘিরে চক্কর দেয়। অনেকেই সেই কুকুরের দলকে দেখতে পেয়েছেন।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তারা শুধুমাত্র আমাবস্যার রাতেই উপস্থিত হয় এবং সারা মাসে তাদের আর দেখা যায় না। কয়েকজন যুবক মিলে একবার রাত করে তাদের দেখার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তাদের মাঝে ২ জন কুকুরের কামড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়।
যুবকদের প্রায় সকলেই একই স্বীকারউক্তি দেয় যে, সেই সব কুকুরগুলো কালচে বর্ণের ছিলো, কারণ অন্ধকারে তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।
তারা একটা ছন্দ মিলিয়ে এক লাইনে হাঁটছিলো এবং তাদের প্রত্যেকের চোখ থেকেই এক প্রকার নীলচে আভা বের হচ্ছিল।
ভূতুড়ে পুরান ঢাকা
পুরান ঢাকাতে কিছু মিষ্টির দোকান আছে যেখান থেকে কিছু লোক কয়েকদিন পর পর এসে রাত ৮টার দিকে ১০-১২ কেজি মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। তারা যেই দোকানে ঢুকে সেই দোকানের মালিককে লাইট নিভিয়ে দিতে বলে। অন্ধকারে তারা আসে, অন্ধকারে চলে যায়। এই লোকগুলো আকারে অনেক লম্বা এবং তাদের চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখতে পারে নি। ধারণা করা হয়, এরা জীন প্রজাতি। পুরান ঢাকার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানের লোকেরাই উনাদের কথা জানেন।
পুরান ঢাকার একটি গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে নাকি রাত ১২টার পর একটা বউকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। যার পড়নে থাকে লাল পার দেয়া একটা হলুদ শাড়ি।
সে কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায় তা কেউ আজ পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে নি। অনেকেই নাকি বউটাকে দেখেছে।
ভূতুড়ে জায়গা লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লার নিচ দিয়ে অনেক গুলো সুড়ঙ্গ আছে, যেগুলো জমিদার আমলে করা। জমিদাররা বিপদ দেখলে সেইসব পথে পালিয়ে যেতো। তেমনই একটা সুড়ঙ্গ আছে, যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। মানে, সে আর ফিরে আসে না। পরীক্ষা করার জন্য একবার ২টা কুকুরকে চেইনে বেঁধে সেই সুড়ঙ্গে নামানো হয়েছিলো।
চেইন ফেরত আসে ঠিকই কিন্তু কুকুর দুটো ফিরে আসে নি।
গদ্রবঙ্গা
বাংলাদেশের সাঁওতাল উপজাতিরা অনেক দেব/দেবীর পুজা করে।। এই সব দেব/দেবীর মাঝে কিছু আছে যারা অপদেবতা। তেমনি এক ধরনের অপদেবতার পুজা করে সাঁওতালরা যাদের “গদ্রবঙ্গা” বলা হয়।
এইসব দেবতারা সাইজে ২-৩ ফিট হয়। চেহারাও ছোট বাচ্চাদের মতো। ওরা বিভিন্ন সাঁওতাল পরিবারেও পালিত হয়ে থাকে। ওদেরকে লালন, পালন, আর পূজা দেয়ার কারণ হলো, এইসব দেবতারা যেইসব পরিবারে পালিত হয় তাদেরকে অনেক ধনী করে দেয়।
এইসব দেবতারা অন্য বাড়িঘর থেকে স্বর্ণ চুরি করে তা নিজ পালিত ঘরের মালিককে দেয়। তবে, এর বিনিময়ে তারা যা দাবি করে তা খুবই ভয়ঙ্কর। স্বর্ণ দেয়ার বদলে এইসব অপদেবতারা যে বাড়িতে পালিত হয়, সেই বাড়ির মালিকের ছোট ছোট ছেলে সন্তানগুলোকে চায়।
তারা এইসব ছোট ছেলেদেরকে মেরে ফেলে (কথিত আছে, খেয়ে ফেলে, কারন সেইসব ছোট বাচ্চাদের আর পাওয়া যায় না)।
আর বাড়ির মালিক যদি তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তাহলে “গদ্রবঙ্গা” রা ঐ পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়।
এসব জানার পরও এখনো সাঁওতাল অনেক পরিবারই ধনী হবার লোভে এইসব অপদেবতা পালন করে আসছে।
তেজগাঁও
ঢাকার তেজগাঁও এর মনিপুরীপাড়া এলাকায় একটা পুরনো খ্রিস্টান বাড়ি আছে। এই বাড়িতে ভাড়া থাকা প্রায় সব ভাড়াটিয়াই বিভিন্ন অদ্ভুত বা ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার সম্মুখীন হন। অনেক সময়ই গভীর রাতে(রাত ১-২টার দিকে) বাড়িটার নিচের উঠোনের দোলনায় কাউকে দুলতে দেখা যায়। ঘটনাটি দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এছাড়াও বাড়ির ছাদে অনেকসময় নাকি গভীর রাতে কারা হইচই করে। কিন্তু সেই মুহূর্তে ছাদে গেলেও কাউকে দেখা যায় না। এই বাড়িটিকে ঘিরে লোক মনে কৌতূহলের কোনো শেষ নেই।
শোনা যায়, উক্ত বাড়িওয়ালার মেয়ে প্রায় ১৬ বছর আগে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে মারা যায়।
মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। এই আত্মহত্যার পর থেকেই এমন অদ্ভুতুড়ে কার্যকলাপ শুরু হয়।