মজার কিছু খেলে কিভাবে কমবে স্বাস্থ্য?

প্রশ্নটা প্রায় সবার, মজার খাবার খেয়ে কীভাবে কমানো যায় স্বাস্থ্য?

এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য। স্বাস্থ্য বেড়ে গেলে আমাদের আয়নার সামনে যেতে ইচ্ছে করে না। কোন কিছু করতে ইচ্ছে করে না। সব কিছুতে বিরক্ত লাগে। তারপর আমরা বিভিন্ন ধরনের অখাদ্য খাবার খেতে শুরু করি। যা খেতেও ভালো না এবং শরীরে ক্ষতি করবে। আবার মুখরোচক খাবার ও খাওয়া যাবে না ডায়েট নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে। কি করা যায়??

আজকের বিষয়টা হল কিছু মজাদার খাবার, যা খেতে যেমন মজাদার, তেমন যত খাবেন তত কমবে ওজন।

যে গরু শুধু ঘাস খায় সেই গরুর মাংস

নিউট্রিশন জার্নালের গবেষণায় এসেছে যে ঘাস খাওয়া গরুর মাংসে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ অনেক বেশি যা আমাদের হৃদপিণ্ডের সমস্যা থেকে রক্ষা করে থাকে। ঘাস খাওয়ানো গরুর মাংসে স্বাভাবিক ভাবেই ক্যালরি কম থাকে অন্যান্য মাংসের তুলনায়। কারণ একটি সাধারণ গরুর মাংসের টুকরায় ৩৮৬ ক্যালরি থাকে এবং ফ্যাট থাকে ১৬ গ্রাম ও একটি ঘাস খাওয়ানো গরুর মাংসের টুকরায় ২৩৪ ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে মাত্র ৫ গ্রাম।

নাপাতি

মজার খাবার
নাশপাতির নানা গুন

আমারা অনেকে হয়তো এটা জানি না নাশপাতি খেলে ওজন কমে। বাংলার একটি পরিচিত সুস্বাদু ফল। এটি খেলে খুদা কম লাগে। এবং পেটের মেদ দ্রুত কাটে। এটি বিদেশী ফল আপেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভিটামিন সি ও প্রোটিন সম্পন্ন। নাশপাতি পার্বত্য এলাকায় একটি নতুন সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে কৃষকের মাঝে পরিচিতি পেয়েছে।

ডিম

মজার খাবার
ডিম খান প্রতিদিন

ছোট্ট একটা ডিম হাজারও ভিটামিনে ভরা। আপনি যা খাচ্ছেন সেই খাবারকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে ডিমে থাকা ভিটামিন বি-১২। ডিমের সবচেয়ে বড় গুণ এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্রেকফাস্টে রোজ একটি ডিম মানে সারা দিন আপনার ক্ষুধা কম হবে তাই খাওয়া হবে কম। গবেষণায় দেখা যায়, শরীর থেকে দিনে প্রায় ৪০০ ক্যালরি কমাতে পারে সকালে একটি ডিম খাওয়া। তার মানে মাসে ওজন কমার পরিমাণ প্রায় তিন পাউন্ড। সমীক্ষা বলছে, ৬৫ ভাগ বডি ওয়েট, ১৬ ভাগ বডি ফ্যাট, ৩৪ ভাগ কোমরে জমে থাকা মেদের পরিমাণ কমাতে পারে ডিম! নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে, ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায় না। দিনে দুটি ডিম শরীরের লিপিড প্রোফাইলে কোনো প্রভাব ফেলে না। বরং ডিম রক্তে লোহিতকণিকা তৈরি করে। ডিম প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। শরীরের জন্যও বেশ ভালো। ডায়েট যারা করেন তারা একটি ডিম রাখুন সকালের নাস্তায়। পুরো দিনে শরীরে কাজ করার  ক্ষমতা পাবেন। পাশাপাশি ওজন কমাতে পারবেন।

 

কালো বা ডার্ক চকলেট

মজার খাবার
ওজন কমাতে সহায়তা করে কালো চকলেট

চকলেট প্রেমীদের জন্য সুখবর আপনার পেটের মেদ কমাবে ডার্ক চকলেট। একটি গবেষণায় এসেছে যে কোন ব্যক্তি যদি ভারী কোন খাবার খাওয়ার আগে ৩.৫ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেয়ে থাকেন এবং ঠিক একই সময়ে যদি কেউ মিল্ক চকলেট খেয়ে থাকে তাহলে যেই ব্যক্তি ভোজনের আগে ডার্ক চকলেট খেয়েছে তার ১৭ ক্যালরি খরচ হয়েছে। কারন গবেষণা বিশ্বাস করে যে ডার্ক চকলেটে আছে পিউর কোকো বাটার ও স্টিয়ারিক এসিড যা হজম গতি বৃদ্ধি করে। অন্য দিকে মিল্ক চকলেটে আছে ফ্যাট বাটার যা খুব দ্রুত ওজন বাড়িয়ে দেয়। আর ডার্ক চকলেট আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে ও দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

কাঠবাদাম

মজার খাবার
বাদাম মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে

প্রতিদিন নিয়ম করে কাঠবাদাম খেতে পারলে ভালো কোলেস্টেরল অথবা এইচডিএল-এর (হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) মাত্রা বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল অথবা এলডিএল-এর (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ডাক্তাররা শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি দেহের চর্বি নিয়ন্ত্রণে কাঠবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে লবণাক্ত কাঠবাদাম এড়িয়ে চলুন।

মোনোপেজের পর নারীদের নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা মোনোপেজকালীন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আপেল

মজার খাবার
প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না

আপেল খুবই পুষ্টিগুণে ভরপুর। আপেল খেলে খাদ্যের চাহিদার সাথে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে মেদ জমে না এবং স্বাস্থ্য সঠিক থাকে। আর প্রতিদিন গড়ে ৩টি আপেল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব সহজ হয়। আপেলের শর্করা শক্তির উৎস। এই শর্করা খাদ্যনালীতে ধীরে-ধীরে ভেঙ্গে হজম হয় বলে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। প্রতিদিন আপেল খেলে হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় পেটে। ফলে হজম শক্তি বাড়ে। যখন হুটহাট ক্ষুধা লাগে তখন অনেকেই অস্বাস্থ্যকর হাবিজাবি খাবার খান যা শরীরের জন্য ভালো না এবং ওজনও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং মুটিয়ে যাওয়া দূর করতে একটি আপেল রাখুন সাথে।

টমেটো

মজার খাবার
টমেটো খেলে আপনার ত্বকের সব সমস্যা দূর হবে

যাদের স্থুলতা নিয়ে চিন্তা, তারা এই প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। প্রতিদিনের প্রচুর পরিমাণে টমেটো আমাদের দেহের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে এবং দেহে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না। যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য টমেটো অনেক বেশি ফলদায়ক। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন ২৫ গ্রাম টমেটো খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। পুরুষদের জন্য ২৫ গ্রাম এবং নারীদের জন্য ৩৫ গ্রাম টমেটো ফলপ্রসূ। চমৎকার ভাবে দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এই টমেটো।

মুগ ডাল

মজার খাবার
মুগ ডাল খেলেও ওজন কমে

মুগ ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ক্ষুধা কম লাগে। আর কম খেলে এমনিতেই ওজন কমে আসে। এছাড়া খাবারটিতে কম চর্বি এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন থাকায় তা মাংসপেশীকেও চর্বিমুক্ত রাখে।

সামুদ্রিক মাছ

মজার খাবার
সামুদ্রিক মাছের তেল হার্ট ভালো থাকে

সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড মেদ বৃদ্ধিতে দায়ী চর্বি পোড়াতে এবং শরীরে ভালো চর্বির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ থেকে যে ফ্যাট পাওয়া যায় তার নাম ‘পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’। বাদাম ও জলপাই তেলের মতো সামুদ্রিক মাছের ফ্যাটও ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

মধু লেবু

মজার খাবার
মধু লেবু আপনার শরীরের টক্সিন বের করে দেয়

ওজন কমাতে দুটি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর সম্পর্কে অনেকেই জানেন। ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে। শরীরের ভেতরের নালীগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়। মেটাবলিজম/হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে। ঠাণ্ডা লাগলে লেবু ও মধুর কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী । এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

মধু

মজার খাবার
মধু মিষ্টি হলেও আপনার ক্ষতি করবে না

ওজন কমাতে মধুর উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে কিছুদিন খেয়েই দেখুন, এর উপকারিতা নিজেই বুঝতে পারবেন।

কাঁচা মরিচ

মজার খাবার
কাঁচা মরিছ আপনার প্রতিদিনের ভিতামিন-সি এর অভাব দূর করবে

কাঁচা মরিচ মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কাঁচা মরিচে অবস্থিত ক্যাপসাইসিন খাদ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি শুষে নিয়ে শরীরে মেদ রোধ করতে সাহায্য করে। চর্বি জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খেলে মোটা হওয়ার কোনা ভয় থাকে না। কারণ কাঁচা মরিচ খাদ্যের সঙ্গে থাকা চর্বিকে ধ্বংস করে। ফলে স্লিম থাকা যায়।

শেষের খাবারটা হয়তো কমবেশি সবাই খান তাই দিলাম।

আশা করি যারা খুব সহজ পদ্ধতিতে ওজন কমাতে চান তাদের উপকারে আসবে।

 

 

 

 

 

Leave a Comment