শিশু স্বাস্থ্য হারাতে পারে যে সকল শীতকালীন রোগে

আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। জীবন ধারণের জন্য অনেক জনপ্রিয় এই আবহাওয়া।

গ্রীনহাউস এফেক্ট আর বৈশ্বিক পরিবর্তন আমাদের প্রকৃতি নষ্ট করছে।

এই জন্য একদিকে আমাদের দেশের গরমকালে তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে আবার অন্য দিকে বেড়েছে শীতের প্রকোপ।

তাপমাত্রার এমন আকস্মিক উঠানামার কারণে দেখা দিচ্ছে নানান ধরণের রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু।

শীতের মৌসুমে এমন কিছু রোগ আছে যেগুলো একটি শিশুকে সারা জীবন ভোগাতে পারে। সাবধানতা অবলম্বন করলে বেঁচে যেতে পারে আপনার ছোট্ট মানিক।

আসুন জেনে নেই রোগগুলোর সম্পর্কে।

নিউমোনিয়া

শিশুর জন্য ভয়ংকর এক রোগের নাম নিউমোনিয়া। এই রোগে এখন পর্যন্ত অনেক শিশু প্রাণ হারিয়েছে।

নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস ফুলে ওঠে এবং ফুসফুসের ভিতর তরল পদার্থ জমা হয় যার ফলে বাচ্চারা একটানা কাশিতে ভুগতে পারে, এমন কি শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়াও আশ্চর্য নয়।

নিউমোনিয়া কি সেই সম্পরকেই জানেনা অনেকে। ঠাণ্ডা থেকেই হয় এই রোগটি। তাই মাকে অবশ্যই শীতকালে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

বাচ্চা যেন প্রস্রাবে ঘুমিয়ে না থাকে, জামা কাপড় যেন সব সময় শুষ্ক থাকে। এই সব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভুলেও যেন বাচ্চার মাথায় কুয়াশা না লাগে।

শিশুর হাঁচি কাশি বেশি দিন স্থায়ি হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

যদি দেখেন অতিরিক্ত সর্দির জন্য শিশু স্তন্য পান করতে পারছে না তাহলে যত জলদি পারেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন বের হয়েছে। এই ভ্যাকসিন দিলে শিশুর নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

এই রোগ ছোঁয়াচে সুতরাং শিশুকে সাবধানে রাখবেন।

ব্রংকিওলাইটিস

ব্রংকিওলাইটিস শিশুদের ফুসফুসের একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যাতে আক্রান্ত শিশুরা ভয়ানক কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগে। সাধারণত ২ বছরের কম বয়সী শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়।

কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করলেও এই রোগ হতে পারে। নবজাতক কে কখনই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রাখা ঠিক নয়।

প্রাথমিক ভাবে হালকা জ্বর, হাঁচি কাশি আর সর্দি থাকতে পারে। আক্রান্ত শিশুরা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে, অস্থির থাকে।

শ্বাসকষ্টের জন্য তাদের খেতে ও ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও দ্রুত শ্বাসের সঙ্গে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়।

উপসর্গ দেখেই এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। রক্ত পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

জরুরী ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করুন।

এজমা অথবা হাঁপানি

হাঁপানি রোগটি সহজে নির্ণয় করা যায় না। এর তীব্রতা যখন বেড়ে যায় তখন বোঝা যায়।

সময় মতো নিরাময় না করলে সারা জীবন ভুগতে হয় এই রোগে। কিন্তু নির্ণয় করা অনেক সহজ।

শিশু যখন শ্বাস প্রশ্বাস নেয় তখন অনেক কষ্ট হয়, বুকে কান রাখলে বাঁশির মতো আওয়াজ শোনা যায়। শ্বাস নেয়ার সময় বুক একদম দেবে যায়।

কিছু খাবারে এলার্জি দেখা যায়। খুসখুসে কাশি থাকে। এই উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। নয়তবা আপনার অসাবধানতার জন্য শিশুটির সারা জীবন এই রোগ বহন  করে চলতে হবে।

হাম

হাম এক অত্যন্ত সংক্রামক রোগ আর এটা ছড়ায় যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে। শুরুর দিকে সর্দিকাশি আর জ্বর থাকে।

দুদিনের মাথায় দেখা দেয় অন্যান্য সমস্যা যেমন শ্বাসনালীর বন্ধ হয়ে আসা মানে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসে সংক্রমণ মানে ব্রোঙ্কিওলাইটিস, কানের সংক্রমণ বা বাচ্চাদের গলা ফুলে যাওয়ার মত উপসর্গ।

আপনার শিশুর হাম হলে তাকে অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশা থেকে বিরত রাখুন নাহলে অন্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকেন পক্স

চিকেন পক্স বাচ্চাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। সারা গায়ে দেখা দেয় পক্সের দানা যেগুলো বিশ্রী রকমের চুলকানির উৎস হয়ে দাঁড়ায়।

পক্সের সময় হালকা ফ্লুয়ের লক্ষণও দেখা দেয়।

জ্বর আসে গায়ে। জ্বরের মাত্রা তীব্র হতে পারে। ভয় পাবার কারণ নেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

তবে আশার কথা এই যে শিশুদের একবার চিকেন পক্স হয়ে গেলে ভবিষ্যতে ফের এই রোগের পাল্লায় পড়ার সম্ভাবনা বেশ কম।

এ রোগ হলে আপনার বাচ্চাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। আপনাকে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কারণ এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ।

আপনার শিশুর কোন খেলার সঙ্গীর পক্স হলে তার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এসব বিষয়ে।

চর্ম রোগ

শীত এলে শিশুর ত্বকে চর্ম রোগ হতে পারে। শীতের শুষ্ক বাতাসে নানা ধরণের রোগ জীবাণু ঘুরে বেরায়।

খেলায় মত্ত থাকা আপনার বাচ্চাকে সব সময় পরিষ্কার করে রাখাটা হয়তো খুব কষ্টকর। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ হয়।

আর একটি রোগ আছে যার নাম আমরা প্রায় সবাই জানি।

রোগটি হচ্ছে স্কেবিস। বাংলায় খুজলি পাঁচড়াও বলে থাকেন অনেকেই।

এটির সঙ্গে যদিও সরাসরি শীতের বা বাতাসের আর্দ্রতার কোনো সম্পর্কের কথা জানা যায় না তবুও দেখা গেছে এ রোগটি শীত এলেই ব্যাপক আকারে দেখা দেয়।

বিশেষ করে শিশুরা এতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে থাকে।

শীতকালে যেহেতু এক বিছানায় একত্রে অনেকেই চাপাচাপি করে শোয় সে কারণে রোগটি এ সময়ে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে।

এ রোগটি আমাদের দেশের গরিব শ্রেণীর মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে সব শিশু স্কুলে যায় তারাই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ। যে কীটটি দিয়ে এ রোগটি হয় তার নাম হচ্ছে স্কেবিয়াইসারকপটিস স্কেরিবাই।

এক্ষেত্রে শরীরে অসম্ভব রকম চুলকানি হতে দেখা যায় এবং রাতে চুলকানির তীব্রতা আরো বাড়ে।

ডাক্তারের পরামর্শে ক্রিম ব্যবহার করলে সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারেন।

Leave a Comment