শৈশবকাল প্রত্যেক মানুষের জীবনের মধুময় একটি কাল। শৈশবের দিন গুলো স্মৃতির পাতাকে দিন দিন দুর্বল করে তুলছে। যতবার মনে পড়ে প্রত্যেকবার সেই শৈশব যেনো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। কে যেনো হৃদয় প্রান্তরে হাতছানি দিয়ে ডাক দিয়ে যায়। কিন্তু তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না আমি যে বাঁধা পড়ে গেছি। শৈশবের দিন গুলো ছিলো অনেক দুরুন্তপনায় মাখানো, দুষ্টামিতে ঘেরানো আর সারাদিন ছোটাছুটি করে দৌড়ে বেড়ানো প্রতিটা মুহুর্ত যেনো স্বর্গ সুখের ছোঁয়া।
ফেলে আসা দিন গুলোতে আজো ফিরে যেতে মন চায়, মন চায় আবার প্রজাপতির মত ডানা মেলে দূর প্রান্তরে সবুজে ঘেরা মাঠে উড়ে বেড়াই।
চলমান জীবনের সঙ্গে বৃষ্টি ঝরার মত যা কিছু অদৃশ্য হয়ে পেছনে হারিয়ে যায় তার মধ্যে শৈশব কাল অন্যতম। হারানো প্রতিটি দিন হয়ে উঠে এক একটি ডায়েরী, এই ডায়েরীর পাতায় লেখা হয়ে যায় স্মৃতির পাঠাশালা আর অবুঝ হাসি কান্নার শৈশব। প্রতিটী শৈশব জীবন ভবিষ্যতের এক একটি হারানো অধ্যার হয়ে দাঁড়ায়। কোন মানুষের কথা অথবা প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে শৈশব নামের মধুর কাল ছুটে চলতে থাকে নিজ স্বপ্নে।
আপনিও হয়তবা শৈশবের কথা শুনে আপনার স্মৃতির ডায়েরীর পাতায় হাতড়ানো শুরু করেছেন সেই সব সোনালি দিন গুলোর কথা ভাবছেন। কিন্তু যখন শৈশব মধুর অথবা সুন্দর না হয় তখন আমাদের মানসিকতার উপর কতোটা প্রভাব ফেলে তাই নিয়ে থাকছে আজকের লেখাটি।
শৈশব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের উপর নির্ভর করে আপনার বাকি জীবনের অধ্যায়গুলো কেমন যাবে।
একাকীত্ব
শৈশব যদি একাকীত্বে কাটে তাহলে শিশুমনে অনেক প্রভাব পড়ে।
একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসার জন্য তখন শিশুরা নানান পথ অবলম্বন করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা মা চাকরী করতে চলে যান সন্তানকে একা রেখে।
বাসায় এসেও হয়তো তাদের সময় হয়না শিশুটির সাথে কথা বলতে। জানতেও চান না কি করে কাটলো তার দিন।
শিশু মনের অভিমান অনেক ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
আর সেই অভিমান যদি কখনো ভাঙার চেষ্টা না করা হয়, তাহলে তা বাবা মার বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
এমতাবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে।
একজন অপরাধী কখনই জন্মগত ভাবে অপরাধী হন না।
তার অপরাধী হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশী দায়ী তার পরিবার এরপর তার সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা।
পারিবারিক কলহ
শিশু যদি দেখে সব সময় তার বাবা মার ভেতর ঝগড়া বিবাদ লেগে আছে তাহলে সেই শিশুর মনে পরিবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
মাকে যদি দেখে বাবাকে অসম্মান করতে তাহলে সেও একসময় এটাই অনুসরণ করে, মার ক্ষেত্রেও একি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেকটি পরিবারের মধ্যে মতমতের মিলঅমিল দেখা যেতে পারে। ঝগড়াও হতে পারে।
কিন্তু তা যদি আপনার শিশুর সামনে প্রতিনিয়ত করেন তাহলে সে আর স্বাভাবিক মন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না।
জন্ম দিয়েছে বলে বাবা মার কোন অধিকার নেই একটি শিশুর শৈশব এবং তার সারা জীবন নষ্ট করার।
সৃষ্টিকর্তা একটি সন্তানকে সুন্দর ভাবে বেড়ে তোলার জন্য বাবা মার কাছে দেন।
বাবা মা হতে হলে তাই দেখে নিন আপনি এত বড় দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা।
শৈশব শাসনের জন্য নয়
অতিরিক্ত শাসন একটি সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় মানসিক নির্যাতন। আপনার করা অতিরিক্ত শাসন আপনার সন্তানের জীবনে ভিবিন্ন রকমের বিরূপ প্রভাব ফেলে। ক্রমাগত অতিরিক্ত শাসন সন্তানের মানসিক ভারসাম্যকে এলোমেলো করে দেয়। প্রচন্ড মানসিক চাপে ভোগে। এভাবে মানসিক চাপে থাকতে থাকতে সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি সারা জীবনের জন্য সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। সন্তান সবসময় শাসনের মুখে থাকলে নিজেকে একলা ভাবে ও বিষণ্ণতায় ভোগে । এতে করে তারা মা-বাবার সাথে ভয়ে কথা বলা থেকেও নিজেকে বিরত রাখে । তাদের সামনে যাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখে ফলশ্রুতিতে তাদের ভুল পথে পা বাড়ানো বা ভুল সঙ্গের সার্নিধ্যের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। ছোট বেলা থেকেই বাবা মায়ের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা শাসনের স্বীকার শিশুরা অধিকাংশই হিংস্র হয়ে বেড়ে ওঠে। আবার কিছু সংখ্যক শিশু হয় খুব ভীতু। জীবনের চলার পথে প্রতিটি পা এগুতেও খুব বেশি ভয় পায় তাঁরা। ফলে সব সময়েই সবার পেছনে পড়ে থাকে।
নৈতিকতার অভাব
শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলি গড়ে তুলতে পরিবারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ পরিবারেই এসবের বীজ প্রোথিত হয়। এছাড়া সামাজিক পরিবেশ দেখে শিশুরা অনেক কিছু শেখে। এজন্য সমাজকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। পৌরনীতির ভাষায় ‘পরিবারকে বলা হয় মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রথম শিক্ষাগার’। যেখানে একজন ছেলে বা মেয়ে বড়দের শ্রদ্ধা করা ও ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা পায়। পরিবারই হচ্ছে এক্ষেত্রে প্রথম ধাপ। বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবারের গণ্ডির বাইরে ছেলে-মেয়েরা যখন তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মিশে তখন তারা আরও বেশি শেখার সুযোগ পায়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে শিশুরা নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশে। এর ফলে অন্যদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তাদের মধ্যে নানা নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে। যদি বাবা মাকে অনৈতিক কিছু করতে দেখলে শিশু নিজেই তা অনুকরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে কোন ভাবেই শিশুটিকে দায়ী করা যাবেনা।