অভিভাবক-দের উদ্দেশ্যে কিছু জরুরি কথা।

“বাবা-মা”

আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার কারণে তোমারা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছ না। আমি শুধু তোমাদের কষ্টই দিলাম। বিশ্বাস কর আমি অনেক পড়েছিলাম কিন্তু কি হল বুঝতে পারলাম না। রেজাল্ট শোনার পর থেকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা কেমন দুলছে। একটু আগে তোমারা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছিলে যাই রেজাল্ট হোক। দুশ্চিন্তা কর না। সেই তোমরা হঠাৎ করে কেমন যেন হয়ে গেলে। আমাকে একটুও বুঝলে না। আমি কি এতই খারাপ যে আমার কথাটাও শুনলে না? আমি আর তোমাদের কষ্ট দিতে চাইনা। আজকের পর থেকে আমাকে নিয়ে আর তোমাদের লজ্জা পেতে হবে না। ভালো থেকো তোমরা।

ইতি

তোমাদের…।

চিঠিটা কি পরিচিত লাগছে আপনাদের কাছে?

২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের পর বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা। অনেক ছোট ছোট ভাইবোনেরা চলে গেছে না ফেরার দেশে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে এ প্লাস না পেয়ে অনেকে আত্মহত্যা করেছে ফেল করে। ওদের এই চলে যাওয়ার পেছনে কাদের দায়টা সবচেয়ে বেশি? বলতে পারবেন??

আমাদের বয়স যখন স্কুলে পড়ার তখন থেকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেন অভিভাবক। “তোমাকে এই স্কুলে পড়তেই হবে”। অনেকে কাঙ্ক্ষিত স্কুলে পড়ানোর জন্য ক্লাস ড্রপ দেয়ায় নিজের সন্তানকে। তখন এটা মাথায় একবারও আসে না সে কি অনুভব করছে? সে কি এতো চাপ নিতে পারবে? সেই যে শুরু হয় শিক্ষা যুদ্ধ তা চাকরি যুদ্ধে গিয়েও যেন শেষ হতে চায় না।

প্রতি ক্লাসে তোমাকে প্রথম হতে হবে। ও পারলে তুমি কেন পারবে না? এমন হাজারও প্রশ্নের ভেতরে সন্তানের মনের কথা শোনার মত সময় কারো থাকে না। তাই হয়তো তাদের মৃত্যুর পর তাদের কথা গুলো চিঠির মাধ্যমে দেখতে পান। কোন ছাত্র যদি পরীক্ষায় ১০০ তে ৫০ পায় তাহলে তাকে বকা অথবা অপমান না করে এটা অনুসন্ধান করুন সে কেন কম পেয়েছে? কম পাওয়ার কয়েকটা কারণ থাকাতে পারে। যেমনঃ

১। ঐ বিষয়ে সে মনোযোগী ছিল না।

২। সে ফাঁকি বাজি করেছে।

৩। তার এই বিষয়ে পড়তে ভালো লাগে না।

৪। কোন কারণে সে মানসিক ভাবে ভালো নেই।

উপরের কারণ গুলোর ভেতরে শুধু ২ নম্বর কারণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বকা দেয়া হয়। কিন্তু কখন বাকি গুলো নিয়ে চিন্তা আসে না। সব গুলো বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলা দরকার। বকা দিয়ে কখন কোন ভালো কিছু হয় না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় প্রতিটি শিক্ষার্থী এক ভিন্ন মানসিকতার মধ্য দিয়ে যায়। খুব নড়বড়ে থাকে চিন্তা চেতনাগুলো। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল অনেক কিছু নির্বাচন করে দেয়। ফলাফল পেয়ে তাই অনেকে হতাশায় পরে যায়। সেই মুহূর্তে তার পাশে না দাড়িয়ে তার সাথে অপমানসূচক কথা বলা সত্যি নির্মম।

পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলে ফেলেন কোন আশানুরূপ ফল না পাওয়া অভিভাবক দের সাথে। একবার কি এটা তাদের মাথায় আসে না এই কথা গুলোর প্রভাব অন্য কারো উপর আসতে পারে।

সবচেয়ে অবাক লাগে যখন তাদের কথা শুনে আমাদের অভিভাবক খারাপ ব্যাবহার করেন। যারা আপনার সন্তানকে খাওয়ায় না, পড়ায় না তাদের কথা শুনে আপনি আপনার সন্তানের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন, মারধর করেন। একজন শিক্ষার্থী যখন খারাপ ফলাফলের পর মাথা নিচু করে থাকে তখন তাকে আর কি বলার থাকতে পারে। সে যদি যথেষ্ট পরিশ্রম করে থাকে তাহলে তার ফলাফলে আপনি তার চেয়ে বেশি দুখী হতে পারেন না। সুইসাইড নোটগুলো পড়ে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে অভিভাবকদের কথা ভেবে। আপনারা কি সন্তানকে আর একটা সুযোগ দিতে পারতেন না। আপনাদের সন্তান আপনাদের ভবিষ্যৎ। তাদের অবহেলা করবেন না।

আপনারা ক্ষমা না করলে আর কেউ নেই পৃথিবীতে ক্ষমা করার। সৃষ্টিকর্তার পর আপনারাই সন্তানের কাছে সব কিছু।

আপনি যদি চেষ্টা করেন তাহলে খুব সহজেই আপনার সন্তানের বন্ধু হতে পারেন। রাগ দেখিয়ে আপনি তাকে হয়তো বাধ্য রাখতে পারবেন, ভয় দেখাতে পারবেন। কিন্তু সে আপনাকে কখন বন্ধু ভাববে না। আর এটাই সবচেয়ে বড় ভুল। ভালবাসা দিয়ে একবার বলেই দেখুন সে আপনার জন্য কি করতে পারে।

আজ সারাবিশ্বে আইএস সন্ত্রাসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সংগঠনটির মূল নিশানা তরুণ তরুণী। কারণ এই সময় একজন মানুষের মানসিক অবস্থা দোদুল্যমান থাকে। খুব সহজে তাদের প্ররোচিত করা যায়। অভিভাবকরা যদি একটু সচেতন হতেন তাদের সন্তানের ব্যাপারে তাহলে আজ নিবরাস ইসলাম, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ  এর মত জঙ্গিদের সৃষ্টি হতনা। হলি আর্টিজানের  হামলায় অভিভাবকদের অবহেলা এবং সচেতনতা দুই দিকই ফুটে উঠেছে।

বাবামায়ের ভালবাসার উদাহরণ যেখানে আয়াজের মত বীর সেখানে অবহেলার উদাহরণ হিসেবে আছে নিবরাসের মত জঙ্গি। এখানে দুজনের বয়সই একরকম।

Leave a Comment