পরিবারের সাথে ঘুরতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। কিছু দিন আগেই চলে গেলেন গুণী শিল্পী বারী সিদ্দিকী। সেই শোক শেষ হতে না হতেই আর একটি শোক সংবাদ পেতে হল বাংলাদেশ বাসীদের।
লন্ডনের একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্তায় মারা গেলেন মেয়র আনিসুল হক (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আনিসুল হকের একান্ত সচিব এ কে এম মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের সময় ১০ টা ২৩ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারপর তার কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্রটি খুলে ফেলা হয়।
আনিসুল হক মস্তিষ্কের রক্তনালির প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চিকিৎসকেরা তাঁর মস্তিস্কে সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস সনাক্ত করেন। তাছাড়া তাঁর ফুসফুসেও সমস্যা দেখা দেয়। গত কয়েকমাস ধরে তিনি এ রোগে ভুগছিলেন।
আনিসুল হকের বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুর সময় স্ত্রী রুবানা হক ও সন্তানরা তার পাশে ছিলেন।
বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আনিসুল হকের মরদেহ শনিবার সকাল ১১ টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ওই দিনই বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে আনিসুল হককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ২৮ জুলাই পারিবারিক কাজে লন্ডনে যান মেয়র আনিসুল হক।
২৯ জুলাই তাঁর নাতির জন্মদিন ছিল। যাওয়ার পর হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয় পড়লে ১৩ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখেই চলতে থাকে তার চিকিৎসা।
গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ১ মাস পর আবার অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আর সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠিত হয় ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাকে ফোন করে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে তিনি আশীর্বাদ বলেছেন।নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।
অচল এই ঢাকার কিছুটা গতি ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রিক টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধ করে ক্রয়খাতে স্বচ্ছতা আনা।
আনিসুল হক একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় একাধিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন।
সম্প্রতি অনেক নামী দামী ব্যক্তিত্ব হারিয়ে গেছে আমাদের দেশ থেকে। কিন্তু আনিসুল হকের জন্য কেন এত হাহাকার? তাঁর চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না ঢাকাবাসী। অনেককেই প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি কি করেছেন ঢাকার জন্য? আসুন উত্তর গুলো জেনে নেয়া যাক।
আনিসুল হককে নিয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপক ফারাবি হাফিজ লিখেছেন,
‘বহু কিছু। আমার পারসোনাল লাইফে তার সাথে সখ্যতা সেটা একটা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটা হচ্ছে আমার বাসার সামনের একলেনের ভাঙা রাস্তাকে উনি চারলেনের বিশাল হাইওয়ে বানিয়ে দিয়েছেন। যেটা মূলত অন্যদের দখলে ছিল’।
সদ্য সাবেক সেলিব্রিটি সাংবাদিক শরিফুল হাসান নিলয়ের পোস্টে লিখেছেন,
‘ট্রাক চালক মালিক, সিএনজি চালক, মালিক, টেন্ডারবাজ এরা নিজেদের মাস্তান মনে করে।
নেতারা সেই মাস্তানদের ক্ষেপান না কারণ সাহস নেই বা স্বার্থ আছে। আনিস ভাই সেই সাহস দেখিয়েছিলেন’।
রাজধানীর কুনিপাড়া এলাকায় সংস্কার প্রসঙ্গে জেসমিন পাপড়ি নামের একজন কর্মজীবী নারী লিখেছেন,
‘দীর্ঘদিন কুনিপাড়ায় অফিস করতে গিয়ে যত যন্ত্রণার শিকার হয়েছি তাতে এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা ব্যাপার’।
মাইনউদ্দিন আহাম্মেদ সেলিম লিখেছেন,
‘যাহা সরকার, প্রশাসন করতে সাহস করেনি আনিসুল তা করে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন।
সে জন্য ঢাকা উত্তর সিটিতে যারা বসবাস করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন তারা তাকে স্মরণ করতেই হবে।
সাংবাদিক নিলয়ের আরেক ফেসবুক বন্ধু রাসেল আহমেদ লিখেছেন,
‘গুলশানে প্রতিবছর আইল্যান্ড বানানো বন্ধ করে স্থায়ী সমাধান দিয়েছেন। মার্কেটের সামনে হকার উঠিয়েছেন।
এয়ারপোর্ট রোডে বনসাই লাগানোর বিরোধীতা তিনি শুরু করেছেন। আরো অনেক যা অন্যেরা বলেছেন’।
আরেক মন্তব্যকারী ফয়সাল আতিক লিখেছেন,
‘তিনি সাহস দেখিয়েছেন। তার জীবন ছিল উচ্চ গতির। বনায়ন, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার প্ল্যান, বর্জ্য অপসারণে আধুনিক ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন টয়লেট।
স্বল্প সময়ে এমন আরও অনেক কিছু। তিনি পরিকল্পনাগুলো কাগজে আঁকার পাশাপাশি মনেও রাখতেন সবসময়’।
এমন একজন ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে সত্যি আমাদের দেশের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হল। জানি না তাঁর জায়গায় কে আসবে? কিন্তু আমরা ঢাকাবাসী তথা পুরো দেশবাসী তাঁকে অনেক মিস করব।
ভালো থাকবেন যেখানেই থাকবেন। আপনার মত আর কেউ হবে না।
আমি তাকে অনেক পছন্দ করতাম। সেই B.T.V তে অনুষ্ঠান করার সময় থেকেই। বিদায় বেলায় মানুষটাকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় যে সব নেতিবাচক কথা প্রচারিত হোল, তাই জন্য এই বিরাট মনের মানুষটা দেশ বাসির কাছ থেকে সে ভাবে বিদায়ও নিতে পারলেন না। তার এই অকাল বিদায়, মনে খুব কষ্ট পেয়েছি। আল্লাহ্র কাছে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। প্রিয় আনিসুল হক, যেখানে আছেন, ভাল থাকবেন, আর আপনার প্রতি অবিচার করার জন্য আমরা লজ্জিত, অনুতপ্ত, আমাদের ক্ষমা করবেন।।