নতুন কোনো ট্যাক্স আরোপ করা হবে না। বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী

আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট পেশ উপলক্ষে অধিবেশন কক্ষ ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্জের সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভীড়। বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের দ্বাদশতম বাজেট প্রস্তাবনা পড়া শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’-এ শিরোনামের বাজেট বক্তৃতা ৪টা দুই মিনিটে শেষ হয়। বক্তৃতার মাঝে ৩০ মিনিটের জন্য অধিবেশনের বিরতি দেওয়া হয়।

বাজেট বক্তৃতা শেষে পুনরায় নিজ আসনে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আমি পুরো বক্তব্যটি দাঁড়িয়ে দিতে পারিনি। রোজার মাসে অনেক নিয়মও আমি মানতে পারিনি। শুধুমাত্র বয়সের কারণে এটি করতে হয়েছে। এ জন্য সবার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী।’

১৭-১৮ এর বাজেটে কিছু পণ্যের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

৭ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন।

অগ্রিম ভ্যাট বাড়ছে আমদানিতে

বাজেট

আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট ৪ থেকে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আমদানিতে এর প্রভাব পড়বে। বর্তমানে প্রায় ১১০০ ধরনের পণ্য আমদানি হয়, যেখানে ভ্যাট দিতে হয়।

ফার্নিচারের দাম বাড়বে

বাজেট

আসবাবপত্র উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে আসবাবপত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী অর্থবছর থেকে তা ৭ শতাংশ হারে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর বিপণন পর্যায়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট পরিবর্তন করে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

পোশাক

বাজেট

বর্তমানে নিজস্ব ব্র্যান্ড সংবলিত তৈরি পোশাক বিক্রিতে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। সরকার আগামী অর্থবছর থেকে এ খাতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য ব্র্যান্ডবিহীন পোশাক পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হবে।

ছোট ফ্ল্যাট

বাজেট

ছোট ফ্ল্যাট (১ থেকে ১১০০ বর্গফুট) কেনায় খরচ বাড়তে পারে। আর মাঝারি (১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনার খরচ কমতে পারে। কারণ বর্তমানে ১ থেকে ১১০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আর ১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাটের হার রয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে এই দুই ধরনের ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

অবশ্য বড় ফ্ল্যাট (১৬০১ থেকে বেশি) নিবন্ধনের ভ্যাট হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। অবশ্য যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন, তাদেরও খরচ বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনঃনিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।

 

তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় ভ্যাট ৫ শতাংশ হচ্ছে

বাজেট

প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। সম্প্রতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে।

ই-কমার্স আসছে ভ্যাটের আওতায়

বাজেট

অনলাইনভিত্তিক যেকোনো পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর এ সেবার আওতাভুক্ত হবে। এই ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে এবারের বাজেটে।

ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ছে অনেক পণ্যে

সরকার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে তার ওপর ভ্যাট আরোপ করে। ট্যারিফ ভ্যালু সাধারণত বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম হয়। ফলে একই হারে ভ্যাট আরোপ হলেও আমদানি পণ্যের চেয়ে দেশি পণ্যের ভ্যাট দিতে হয় কম।

আসছে বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে- টমেটো পেস্ট, কেচাপ, সস, বিভিন্ন ফলের পাল্প, ফলের জুস, ব্যবহার অযোগ্য ট্রান্সফর্মার অয়েল, লুবব্লেন্ডিং অয়েল, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার প্রোডাক্ট, কটন ইয়ার্ন বর্জ্য, ওয়েস্ট ডেনিম, স্ট্ক্র্যাপ/শিপ স্ট্ক্র্যাপ, সিআর কয়েল, জিপি শিট, সিআই শিট, রঙিন সিআই শিট, ব্লেড, চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস।

তিনি আরো বলেন, মানুষের স্বস্তি অনেক উচ্চ মাত্রায় আছে। দারিদ্র্য একেবারে দূর করা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। তবে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা গেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আন্তরিকতায়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর জোর দিয়ে আসছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনির আওতায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যা আগে কোনো দিন হয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে তা আশাব্যঞ্জক নয়। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি যা আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। হয়তো এটা উচ্চাশা ছিল। তবু অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বিগত দুই বছরের চেয়ে ভালো হলেও আমার প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি। আমি চেয়েছিলাম ২৫-২০ শতাংশ। এটা যদিও বেশি, তবে এটা চাওয়ার পেছনে কারণও ছিল। যারা আয়কর দেন তাদের বেশিরভাগের বয়সই ৪০ এর নিচে। যুব সম্প্রদায় আয়কর প্রদানে অত্যন্ত সচেতন। তারা মনে করে, এটা তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ সবার মধ্যে জাগ্রত হলে আমাদের রাজস্ব আদায়ের হার আরো বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, দিন দিন করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে আদায়ের হার আশানুরূপ বাড়ছে না। আমি আশা করছি, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে আয়কর মূল্য সংযোজন করের কাছাকাছি চলে আসবে।

২০২০ সাল পর্যন্ত নতুন মূল্য সংযোজন কর কার্যকর করছি না। এটা কর্যকর হলে এ খাতে আয় আরো বাড়বে। বর্তমান মূল্য সংযোজন করের তিনটি স্ল্যাব থেকেই বেশিরভাগ কর আদায় হচ্ছে। এগুলো ৪, ৫ এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর খুব কম আদায হয়। যা আইএমএফের শর্ত ছিল। এসব বিবেচনায় আর একটি স্ল্যাব বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এটা কত হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ২০১৮ সাল হবে একটি ভালো বছর। স্বস্তির বছর। আগামী বাজেট হবে গতানুগতিক। নতুন কোনো ট্যাক্স আরোপ করা হবে না।

চালের দাম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এটা ব্যবসায়ীদের কারণে হয়েছে। এটা হওয়া উচিত না। আমরা চেয়েছিলাম, চালের দাম একটু বাড়ুক। যেন কৃষক দাম কিছুটা বেশি পায়। ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত ছিল। ব্যবসায়ীরা সেটা ৬০ পর্যন্ত নিয়ে গেছে।

তবে এক্ষেত্রে সরকারের কোনো গাফিলতি নেই বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তবে দাম শিগগিরই নেমে আসবে বলে জানান তিনি।

1 thought on “নতুন কোনো ট্যাক্স আরোপ করা হবে না। বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী”

Leave a Comment