আকাশটা যেন অনেক বিশাল চাদরে মুড়ে রেখেছে আমাদের এই ধরাকে। কখনো তার রং নীল, কখনো সাদা মেঘে আবার কখনো বিষণ্ণ কালো রং এ যেন নানা রুপের সাজ। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদে মাঠ ঘাট, নদীনালা, খালবিল, পুকুরের পানি শুকিয়ে ফাটল ধরতে থাকে। পশু-পাখি, গাছ-পালা, মানুষ তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠে আর আকুতি করতে থাকে একটু শান্তির বৃষ্টির জন্য। এ যেন তৃষ্ণার্তের শ্রষ্টার কাছে আকুল প্রার্থনা। সব কিছু যখন খুব ব্যাকুল হয়ে থাকে তখন বর্ষার আগমনের সময় হয়ে যায়। তখন তৃষ্ণার্ত প্রকৃতিকে অমৃতসুধায় ভরিয়ে দিতে আসে বর্ষাকাল।
রিমঝিম বৃষ্টি নামার সময় হলে নীল আকাশটা কালো হয়ে যায় যেন তার রূপের পরিবর্তনের শুরু। আর যখন বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হয় তখন চারদিকে সবার প্রাণে নামে শান্তির নিঃশ্বাস। কখনো কখনো চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে, বাতাস বয়ে যায় আর কিছুক্ষণ পর নামবে শান্তির বৃষ্টি। আকাশের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে। রাখাল বালক ছুটে চলছে ঝড় শুরু হওয়ার আগে গরু গুলোকে ফিরিয়ে আনতে, পাখিরা এক ডাল থেকে অন্য ডালে ছুটাছুটি করছে, স্কুলে ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আনন্দের মিছিলে নেমে পড়লো। বৃষ্টি নামলো প্রকৃতি যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে নতুন প্রাণের ছোঁয়ায়। ফুল গুলো আবার হাসা শুরু করছে এ যেন নতুন প্রাণের মেলা।
বর্ষা এলে পাখিরা গাছের ডালে, পাতার ফাঁকে চুপচাপ বসে থাকে। জনশূন্য হয়ে থাকে মাঠঘাট পথ-প্রান্তর। উঠনে জমে থাকে পানি। কানায় কানায় ভরে উঠে নদনদী, খালবিল, পুকুর। চারদিকে পানির থৈ থৈ মেলা। দস্যিছেলেরা দল বেঁধে কলা গাছের ভেলা ভাসিয়ে মনের আনন্দে মেতে উঠে। বৃষ্টির পানিতে সব কিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তখন ভেজা মাটির গন্ধে মন কেমন করে উঠে। সবুজে সবুজে এক অপরূপ সৌন্দর্যে সেজে উঠে প্রকৃতি আর পরিবেশ। বর্ষা কালে বিভিন্ন ফুলের গন্ধে মন মাতোয়ারা হয়ে যায়।
অলস সময় কাটানোর জন্য সবাই চায়ের কাপ হাতে খোশগল্পে মেতে উঠে। অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। প্রকৃতির লীলা খেলার সঙ্গে মানুষের মনেও জেগে উঠে কামনা-বাসনা, প্রেম বিরহের আবহ। বর্ষা এলে শৈশবের অনেক মধুর স্মৃতিতে উদাসীন হয়ে যায় আমাদের মন। বর্ষার জোয়ারে ভাসতে ভাসতে কবিরা তাদের কবিতার মধ্যে প্রেমের ব্যাকুলতা, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করেন। বর্ষা নিয়ে কবিরা কতশত কবিতা, গল্প, ছড়া রচনা করেছেন তার হিসাব নেই। কি মধুর সেসব কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষা নিয়ে লিখেছেন-
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেলো মনে
সে কথা আজি যেন বলে যায়
এমন ঘনঘোর বরষায়।।
বর্ষা এলে বাংলার মাঠঘাট ডুবে যায়। পানিতে সব কিছু টুইটুম্বর করে। পানিতে ভাসমান গ্রামের বাড়ি গুলো যেনো এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ডিঙি নৌকায় বা কলার ভেলায় চড়ে মানুষ এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যায়। বর্ষায় অনেক ফুল ফোটে যার গন্ধ পাগল করার মত। কদম, কেয়া, হাসনাহেনা, কলমিলতা, নিলকলম, দোলনচাপা বিচিত্র ফুলে ফুলে ভরে যায় প্রকৃতি। বৃষ্টিরদিনে সবচেয়ে মজার বিষয় হল রংধনু। বৃষ্টির পর মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য এই রংধনু।
বিরহ-বেদনাকে বর্ষা আরো বেশী বাড়িয়ে দেয়। অঝোরধারায় বৃষ্টির সময় কখনো কখনো বিরহের স্মৃতি মনকে ব্যকুল করে তোলে, আবার কখনো সুখের জোয়ারে ভাসিয়ে তোলে। এ সময়ে সেই ছোট বেলার গ্রামের কথা মনে পড়ে যায় স্কুল ছুটির পর বই রেখে থৈ থৈ জলের মধ্যে শাপলা তুলার জন্য ঝাপিয়ে পড়া, এই আনন্দ আর কিসে পাওয়া যায় তা জানা নেই। সবাই মিলে দল বেঁধে ফুল কুড়ানোর মিষ্টি মধুর সময় খুব বেশী মনে পড়ে যায়। সন্ধ্যা বেলার ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর মধুর ডাক অন্য কোন ঋতুতে শোনা যায় না। রাতের বেলায় টিনের চালের উপর টিপ টিপ বৃষ্টির ফোটার শব্দ ঘুমকে করে তোলে শান্তিময়। জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরে।
মাঝিরা তাদের নৌকায় নতুন পাল তোলে নদীর এপাড় থেকে ঐপাড়ে মানুষ পার করে। আর কোকিলের সুরে গান গায়। কবির ভাষায় বলতে হয়-
আষাঢ়ে বাদল নামে নদী ভরভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।
বর্ষার পানি বাড়তে থাকলে কৃষকের মনে অনেক চিন্তা কাজ করতে থাকে তাদের ফসলের জন্য। বর্ষা কাল যেমন প্রকৃতিকে সৌন্দর্য্য উপহার দেয় তেমনি অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। এ সময়ে বন্যা, ঝড় তুফান হয়ে থাকে যার ফলে আমাদের জীবন যাত্রা অচল হয়ে যায়। অধিক পানির জন্য ফসলের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। আনন্দ বেদনা কত দিক রয়েছে বৃষ্টির। বৃষ্টি আমাদের অনেক সময় হাসায় আবার অনেক সময় কাঁদায়, আবার আবেগে আপ্লুত করে তুলে। বৃষ্টিতে জমে উঠে অনন্য প্রেম। বর্ষা কাল আমাদের যেন প্রেম-বিরহ-ভালোবাসার ঋতু। বর্ষা মানে বৃষ্টিতে ভেজা এক রমণীয় বাংলাদেশ।
সর্বপরি প্রিয় কবি হুমায়ূন আহমেদ– এর একটা উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই-
“পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনসগুলির জন্যে কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমনঃ জ্যোৎস্না, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালোবাসা।”
Ja sosta tai moha molluban.jemon -Batas.pani.Sontan.Bhalubasa.Hasi.R jara sosta manus chilu prithibi gorvho kore tader khathay soron kore.sostai asole dami.
Ja nogonno setai asole mohabulloban hoye jay. Manush asole bujhte pare na, dam dite Jane na setar.
প্রকৃতিতে অনেক অজানা ভালোবাসা আর রহস্য লুকিয়ে আছে। আমাদের সুধু দেখার দৃষ্টির অভাব।
অনেক সুন্দর লেগেছে তোমার কথাগুলো l অনেক সুন্দর l অনেকে বুঝবে না তুমি হৃদয়ের কত গভীরতম প্রদেশ থেকে কথাগুলো লিখেছো l অনেক ধন্যবাদ l আমার ফেইসবুক আইডি https://www.facebook.com/tuhin.rahman.3152