পৃথিবীর পরিবেশ এখন যেমন আছে আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে এমনটা ছিল না। ধীরে ধীরে আবহাওয়া আর পরিবেশ পরিবর্তন হতে থাকে। পরিবর্তন যদি ধীর গতিতে হয় তাহলে প্রাণীরা তাল মিলিয়ে বাঁচতে পারে। কিন্তু যখন প্রকৃতির পরিবর্তন খুব জলদি হয় অথবা পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে তখন প্রাণীদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় আর এভাবেই হারিয়ে গেছে জানা অজানা অনেক প্রাণী। এক সময় যাদের দেখা যেত সর্বদায় বিচরণ করতে আজ তারা হারিয়ে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে। পৃথিবীতে বেশ কিছু বিশাল আকারের প্রাণী ছিল। ডাইনোসরের মতোই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে তারা। তাদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে মানুষেরও হাত। আজ তাদের নিয়েই কথা বলব।
কাসপিয়ান টাইগার
কাসপিয়ান টাইগার ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, তুরস্ক, মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান এইসব অঞ্চলে পাওয়া যেত। ১৯৭০ সাল থেকে এদের আর দেখা যায়নি। এই বাঘটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম। পুরুষ কাসপিয়ান টাইগারের ওজন ১৬৯-২৪০ কেজি এবং স্ত্রী কাসপিয়ান টাইগারের ওজন ৮৫-১৩৫ কেজি হয়ে থাকত। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এখনও এই প্রাণীটির অস্তিত্ব রয়েছে।
স্টেলারস সি কাউ
এশিয়াটিক সমুদ্রের উপকূলের কাছে ওড়মেড়লী প্রজাতীর প্রাণীটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এটি ১৭৪১ সালে খুঁজে বার করা হয়েছিল। এই প্রাণীটি প্রায় ৭.৯ মিটার হয়েছিল। শটেলার অনুসারে, এই প্রাণীটি তীরে কখনও আসে না, জলের মধ্যেই চিরন্তন বসবাস করে। এর ত্বক কালো এবং পুরু, একটি পুরনো ড়ধশ গাছের বাকলের মতো। তবে আশ্চর্যের কথা হল এটির কোন দাঁত নেই। এটাকে ১৭৬৮ সালের পর থেকেই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
কুয়াগা
আধা জেব্রা আধা ঘোড়া। আফ্রিকা মহাদেশের বিচিত্র বিলুপ্ত একটি প্রাণী হচ্ছে কুয়াগা।
এই প্রাণীটি দেখে অনেকটাই অকল্পনীয় প্রাণী মনে হয়। কিন্তু এটিও কোন একসময় সচরাচর দেখতে পাওয়া যেত।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশে একবার খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং যা ছিল একটি বিরল ঘটনা।
এই প্রাণীটার প্রথম অর্ধেক অংশ ছিল জেব্রার মতো দেখতে কিন্তু পিছনের অংশ ছিল ঘোড়ার মতো।
ধারণা করা হয় এটি ১৮৮৩ সালের পর থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এটাকে ১৭৮৮ সালে প্রাণীদের একটি প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
সর্বশেষ ১৮৭০ সালের দিকে একটি কুয়াগা পাওয়া যায় যেটিকে Artis Magistra zoo তে সংরক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু সর্বশেষ পাওয়া এই প্রাণীটি ১৮৮৩ সালের ১২ আগস্ট মারা যায়।
তবে সম্প্রতি Smithsonian সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে যে এই প্রাণীটি আলাদা একটি প্রজাতি ছিল না বরং সাধারণ জেব্রাদের মতোই একটি।
অ্যাওরোকস
অ্যাওরোকস এই প্রাণীটি কোন একসময়ে ইউরোপের বিখ্যাত একটি প্রাণী ছিল। যা ভারত এবং এশিয়ার আরও কিছু দেশে পাওয়া যেত।
১৫৬৪ সালে Gamekeepers রাজকীয় পরিসংখ্যান অনুসারে কেবল ৩৮ প্রাণীর সংখ্যা বের করতে পেরেছিল।
তবে ১৬২৭ সালে এই প্রাণীকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সকল প্রাণী আর দেখা যায়নি এই পৃথিবীতে।
গ্রেট আক
গ্রেট আক প্রাণীটি ছিল পেঙ্গুইনদেরই একটি প্রজাতি, যা এটলাণ্টিক সমুদ্রের পাড়ের দ্বীপ এবং দেশগুলোতে পাওয়া যেত। কিন্তু এগুলো আজ বিলুপ্ত।
এগুলো দাঁড়ানো অবস্থায় ৭৫ সেন্টিমিটার অথবা ৩০-৪০ ইঞ্চি হত। এগুলোর ওজন ৫ কেজির মতো হত।
এগুলো আগে কানাডা, গ্রিনল্যাণ্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, আয়ারল্যাণ্ড এবং ব্রিটেনে বহু সংখ্যক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং শিকারও করা হয়েছিল। তবে ১৮৪৪ সালের পর থেকে এগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
তাসমানিয়ান বাঘ
তাসমানিয়ান বাঘ মাংসাশী প্রাণীর নাম।
বিংশ শতাব্দিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নতুন গিনিতে ওগুলো কিছুটা দেখতে পাওয়া যেত। তবে এটাকে Tasmanian Wolf নামেও ডাকা হত।
ইউরোপীয় উপনিবেশের পূর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং পরে বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে এগুলো দেখতে পাওয়া যেত। ধারণা করা হয় এটি ১৯৩৬ সাল থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।