বলা হয়নি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা

আমি আইজ মির্জা একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়নরত। আমার এতো দূর আসতে অনেক ঝড়, বাধা, সংগ্রাম পার করতে হয়েছে। একটা জীবনের প্রতিটা সময়ের হিসাব কিভাবে কষতে হয় তা আমি জানি বা আমার মত যারা তারাই কেবল জানে। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে পা রাখার জন্য চিন্তা করতে হতো এবার না আমাকে আবার পিছলে পরতে হয়। জীবন মানে হলো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৌড়ানো। যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তবে যেখান থেকে হোঁচট খেয়ে পড়ছেন সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার দৌড় শুরু করা। যাই হোক এভাবে জীবনের অনেকটা পথা পাড়ি দিয়েছি হয়তো বা আরো দিতে হবে।

যখন খুব ছোট ছিলাম বোঝার মত বয়স হয়নি তখন জীবনের দু’টি মূল্যবান জিনিসের মধ্যে একটি হারাতে হয়। ঐ সময় বুঝতে পারিনি হারানোর ব্যাথা এবং কি হারালাম তার মর্যাদা।

মা
মা বাবা একটি সুখী পরিবারের দুটি প্রাণ।

ধীরে ধীরে যখন বুঝতে শুরু করি তখন টের পেতে থাকি ঐ মানুষটার অভাব। কিন্তু তখন পুরোপুরি বুঝতে দেয়নি আমার মা। তিনি একাধারে বাবা-মা দুজনের দায়িত্ব পালন করতেন। সারাদিন কাজের ব্যস্ততার মাঝে থেকেও আমাকে আমার বাবার অভাব অনুভব করতে দেননি। আমি এমন ছিলাম যে আমার মাকে না দেখলে মনে হতো আমি কোথায় আছি এখন?

মা
মা ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার।

মাকে ছাড়া পুরো পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসতো। এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারতাম না উনাকে ছাড়া আমি থাকবো। এতোটাই স্বার্থপরতা কাজ করতো আমার ভিতর। এভাবে বাড়তে পারতো আমার বয়স আরো কতশত দিন কাটাতে পারতাম আমার মা জননীর সাথে। কিন্তু সেটাও বেশী দিন স্থায়ী হলো না। বাবা চলে যাওয়ার মাত্র দেড় বছর পর কোন এক অজানা কারণে জীবন থেকে হারিয়ে যায় আমার সেই মমতাময়ী মা। আমাকে এতো ভালোবাসতো কিন্তু যাওয়ার সময় একবারের জন্যও বলে যায়নি বাবা আমি চলে যাচ্ছি তুই নিজের খেয়াল রাখিস, যত্ন নিস, সময় মত খাবার খেয়ে নিস, বেশী দুষ্টামি করিস না, সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসবি, ঠিক মত পড়াশুনা করবি। আমি দূর থেকে তোর ভালো থাকা দেখে শান্তি পাবো। একবারো ভাবেনি আমার বুকের মানিকটা কিভাবে একা একা নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিবে, পারবে তো আমার মানিকটা??!!

মা
যার মা নেই সে সব সুখ থেকে বঞ্চিত।

হয়তো উনার ভালো থাকাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আমার ভালো থাকার চেয়ে। কত যায়গায় যেতাম অনেক খুঁজেছি প্রতিদিন ভাবতাম আজ হয়তো আমার মা আমাকে দেখতে চলে আসবে আমিও উনাকে আবার দেখতে পাবো। কিন্তু দেখা আর হয়ে উঠলো না। রাস্তা যখন হাঁটতাম তখন সবার মায়ের মুখে তাকিয়ে থাকতাম উনাদের মাঝে মাকে খুঁজে বেড়াতাম। সবার মা যখন রাতে দুধের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাবা পুরোটা খেয়ে নে, না হয় তুই পড়ালেখায় মন দিতে পারবি না আর তখন আমার রাতের খাবারে পেট ভরেছে কিনা তা জানার মত কেউ ছিলো না। সকালে সবার মা নাস্তা নিয়ে রেডি আর চিন্তা করে আমার ছেলে কিভাবে না খেয়ে পড়াশুনা করবে সারাদিন বাহিরে থাকবে, কি না কি খাবে এসব নিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত তখন আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে স্কুলে পাঠানোর মত কেউ ছিলো না। একটা সন্তান তার সব কিছু মায়ের কাছে কোন সমস্যা ছাড়াই বলতে পারে দুঃখ ভাগ করে নিতে পারে। কিন্তু কোন কারণে যদি আমার মন খারাপ হতো কারো কাছে বলার মত মানুষ ছিলো না। তখন হয়তো কোন দুষ্টামি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতাম আর সব ভুলে যেতাম। তাই সব কিছু ভিতরে রাখতে রাখতে আর হালকা হয়ে উঠা হয়নি অনেক বেশী গম্ভীর হতে থাকি।

মা
দুঃখগুলো কেউ বুঝবে না মা ছাড়া।

এভাবে চলতে থাকলো জীবন। আমারও বয়স বাড়তে থাকে একা একা হীনমানসিকতা আমাকে ঘিরে ধরে। একটা মানুষ অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে তার পরিবার থেকে আর পরিবারের প্রধান শিক্ষক হলো মা কারণ বাবা তার পেশা নিয়েই পড়ে থাকে খুব বেশী সময় দিতে পারে না কিন্তু মা তার পরিবারকে ধরে রাখে সন্তান কে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। যখন একটা মানুষ তার দুই অংশ থেকে বিতাড়িত বা বঞ্চিত হয় তখন নিজেকে সামলে নিতে অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখান থেকে অনেকে কেটে উঠতে পারে আবার অনেকে ঝরে পড়ে। এভাবে হারানোর ভয়টা বাড়তে থাকে আর বাড়তে বাড়তে এমন হয়ে গেছে যে আমি আমার জীবনে প্রতিটা মানুষকে হারানোর ভয় কাজ করে। আর ভয়টাই আমার হারানোর আরকেটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি আমার মাকে অনেক বেশী ভালোবাসি যার জন্য আমি পাগল ছিলাম আর সেই ভালোবাসা শুধু ভিতরেই রেখে দিয়েছি প্রকাশ করতে পারিনি।

মা খুবী ছোট একটা শব্দ কিন্তু এই ছোট শব্দের টানটা নাড়ী থেকে উৎপন্ন হয়। “মা” আওয়াজটি কানে প্রবেশ করলেই যেনো মনের ভিতরে মায়া ভালোবাসার মাত্রা অসম্ভব ভাবে বেড়ে যায়। এর ভার এতই বেশী যে অন্য কোন মানুষের তা বইবার সামর্থ্য নেই এবং সে ক্ষমতা অন্য কাউকে দেওয়াও হয় নি। মায়েদের কোন জাতে ভাগ করা যায় না “মা মানেই মা”। একজন মা তার সন্তানকে মমতা আর ভালোবাসার রক্ষাকারী দেওয়ালের মত সব সময় ঘিরে রাখে যাতে বাহ্যিক কোন আঘাত তার সন্তানের উপর হানা দিতে না পারে।

মা
মা চান তাঁর সন্তান সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় থাকবে।

আপনি যখন অন্যায় বা ভুল পথে পা বাড়াবেন তখন আপনার কাছের মানুষ গুলো একবার, দুইবার, তিনবার বা তার চেয়ে বেশী বার পথ দেখাবে কিন্তু এক সময় তারা সহ্য না করতে পেরে আপনার উপর রাগ করে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। অন্য দিকে দয়ার সাগর “মা” আপনাকে তার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আপনার সব কিছু কে সামলে রেখে আপনার পাশে থেকে যাবে আর আল্লাহ্‌র কাছে কাঁদতে থাকবে আপনার জন্য। কোথাও খুঁজে পাবেন না এমন মানুষ শত হাহাকার করলেও পাওয়া যাবে না। যদি পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ ভালো কেউ বেসে থাকে তিনি হলেন মা জননী। অনেক কনকনে শীতের রাতেও আপনার ভেজা কাঁথাটি নিজে গায়ে না দিয়ে নিজের গরম কাঁথাটি আপনার গায়ে দিয়ে দিতেন, তিনিই হলেন সে দরদী মা যিনি নিজের আরামের কথা চিন্তা না করে তার আদরের মানিকটা কে যত্নে রাখতেন। একমাত্র একজন মানুষ এই ধরার বুকে আপনাকে ঠকাবে না তিনি আর কেউ নয় মা। কারণ মা আপনাকে তিলে তিলে নিজে কোটি বার কষ্ট সহ্য করে আপনাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন, আর যাই হয়ে যাক সে মা আপনার প্রতি তার মায়ার দেয়াল ভাঙতে দিবে না।
মাকে কোথাও হারাতে দিবেন না। কারণ হারালেই বুঝবেন মা কেমন জিনিস। সে আপনাকে যেভাবে যত্ন করে মানুষ করেছে ঠিক সেভাবে তাকে যত্ন করে ধরে রাখবেন। মায়ের ভালোবাসা পেতে যেমন আনন্দ লাগে দেখবেন তাঁকে ভালোবাসা দিলেও মনে শান্তি লাগে। পৃথিবীর সব মাকে শ্রদ্ধা জানাই।

3 thoughts on “বলা হয়নি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা”

Leave a Comment