গর্ভবতী মায়ের সুস্থ্যতার উপর নির্ভর করে একটি সুস্থ সন্তান। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের অপর্যাপ্ত খাদ্য ও অপুষ্টি, মা এবং সন্তানের জন্য অনেক মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। গর্ভকালিন সময়ে মা অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকলে অনাগত বাচ্চার ওজন কম হয়, বুদ্ধির বিকাশে বাধা প্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে সন্তান প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহন করে যা গর্ভের সন্তান কে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। তাই মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের দরকার যা মায়ের দেহের ঘাটতি পূরণ করে। গর্ভবতী মায়ের স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশী খাবার খেতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মেয়েরা খুব কম বয়সে গর্ভধারন করে থাকে এবং অপুষ্টি জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ কারণে অনেক সময় মৃত সন্তান প্রসব করে বা অপুষ্ট সন্তান জন্ম গ্রহন করে।
গর্ভকালিন সেবা ও খাবারে তালিকা
-গর্ভবস্থায় ২টি টিটি টিকা দিতে হবে।
-দুপুরের খাবারের পর অন্তত ২ ঘন্টা নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে।
– দুধ, ডিম, মাছ-মাংস, ঘন ডাল, কলিজা, সবুজ শাকসবজি এবং দেশীয় ফল খেতে হবে।
– গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশী খেতে হবে।
-প্রতিদিনের তিন বেলা খাবারের সময় অন্তত তিন এক মুঠ খাবার বেশী খেতে হবে। পরিমাণ মত ঘুমাতে হবে।
-গর্ভকালিন সময়ে তিন মাস পর থেকে প্রতিদিন (সকালে ও দুপুরে) ২টি করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে।
– গর্ভবতি মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে হবে।
-আয়োডিন যুক্ত লবণ খেতে হবে।
– বেশী করে পানি খেতে হবে।
-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
সন্তান ও মায়ের জন্য গর্ভাবস্থায় কিছু চিকিৎসা
মায়ের ওজন, রক্তস্বপ্লতা, রক্তচাপ, গর্ভে শিশুর অবস্থান অন্তত চারবার পরীক্ষা করতে হবে।
-১ম স্বাস্থ্য পরীক্ষা ৪ মাসে
-২য় স্বাস্থ্য পরিক্ষা ২৫-২৮ সপ্তাহে
-৩য় স্বাস্থ্য পরীক্ষা ৩২ সপ্তাহে
-৪র্থ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ৩৬ সপ্তাহে
গর্ভবতী অবস্থায় যে কাজ গুলো করা যাবে না
-বাড়ীর কঠিন কোন কাজ করা যাবে না।
-ভারী কোন কিছু তোলা যাবে না।
-অনেক দূরের যাত্রা থেকে বিরত থাকতে হবে।
-মায়ের সাথে কোন প্রকার উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
-মায়ের শরীরের ঝাঁকি লাগতে পারে এমন কোন কাজ করা যাবে না।
-ধূমপায়ী থেকে দূরে থাকতে হবে।
-তামাক জাতীয় যেমন জর্দা, সাদা পাতা খাওয়া যাবে না।
-স্বাস্থ্য কর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ খাওয়া যাবে না।
সন্তান ও মায়ের প্রসবকালীন ও পরবর্তি যত্ন
-দুগ্ধদানকারি মাকে সকল পুষ্টিকর (আয়রন, ভিটামিন-এ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি) খাবার খেতে হবে।
-পরিবারের সবাইকে মায়ের কাজে সাহায্য করতে হবে।
-গর্ভবতী মাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। তাকে অনেক সাহস দিতে হবে।
-নিরাপদ প্রসব বাড়িতে না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করবেন তা আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে।
-মাকে সব সময় হাসি খুশি রাখতে হবে।
-দুগ্ধদানকারি মাকে বেশী বেশী খাবার খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
-মা যাতে অনেক সময় নিয়ে শিশু কে দুধ খাওয়াতে পারে তার জন্য মাকে সুযোগ করে দেয়া।
-শিশুর জন্মের পর সাথে সাথে তাকে শাল দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে দিতে হবে।
-মায়ের দুধ জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
সন্তান ও মায়ের গর্ভকালিন সময়ে ৪টি গুরুত্বপুর্ন ব্যবস্থা
-প্রসবের জন্য আগে থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধাত্রী বা স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ঠিক করে রাখতে হবে।
-এ সময়ের জন্য বাড়তি খরচ আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
-প্রসবের সময়ে মায়ের অতিরিক্ত রক্তের দরকার হতে পারে। তাই আগে থেকে মায়ের রক্তের গ্রুপের সাথে মিল আছে এমন তিন জন সুস্থ্য ব্যক্তিকে রক্ত দানের জন্য ঠিক করে রাখতে হবে।
-গর্ভকালিন সময়ে দ্রুত হাসপতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে যাতে কোন প্রকার জটিলতা দেখা দিলে সমস্যা না হয়। এজন্য যানবাহন আগে থেকে ঠিক করতে হবে।
একজন সুস্থ মা মানে একটা সুস্থ সন্তান আর একটা সুস্থ সন্তান মানে একটা সুন্দর সুস্থ জাতি।