বাবা (যন্ত্র মানব) বা জনক, সকল সুখের মূল যিনি

আজ আমার পরীক্ষা ছিলো তাই গতকাল রাতে একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম তাই পড়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠতে ক্লান্তি না লাগে। অনেক ঘুমের চাপে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম শান্তির নিদ্রায়। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের সময় হয়ে গেলো চারদিকে আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আযানের ধ্বনি আমার কানে না, মনে হচ্ছিলো আমার বুকে আঘাত করছে। বুকটা তখন কাঁপছিল কেন জানি খুব জোরে কান্না করতে ইচ্ছে করছিলো।

বাবা
ভালো থেকো বাবা যেখানেই থাকো।

এমন অনুভূতির কারণ কয়েকদিন যাবত কিছু ব্যাক্তিগত সমস্যার জন্য দিন গুলো খারাপ যাচ্ছে। জীবন থেকে অনেক মূল্যবান জিনিস হারাতে বসছি সব কিছু মিলিয়ে মন খুব ভার হয়ে আছে। ঘুম ভাঙলে বুক ব্যাথার অনুভব হয়। তাই নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছি। বাবার কথা মনে পড়ছে খুব। এসময় উনি থাকলে আমাকে অনেক মানসিক সাপোর্ট দিতো। আমি যখন খুব ছোট তখন ফজরের নামাজের সময় আমার বাবা আমাকে ডেকে তার সঙ্গে মসজিদে নিয়ে যেত। খুব আরামের ঘুম তবুও উঠে যেতাম। নামাজ পড়া শেষে মনে হত না আরামের ঘুম ভেঙ্গে উঠা আমার জন্য খারাপ হয়েছে বরং মনে অনেক শান্তি লাগতো। তাই আজ আযানের সূর যখন কানে এলো তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে সেই দিন গুলোর কথা মনে করতে থাকলাম। আর মনে মনে নিজেকে নিজে বলতে থাকলাম আজ যদি সেই মানুষটি থাকতো তাহলে হয়তো উনার মধুর কণ্ঠের ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠতে হতো।

বাবা
বাবা এক বিশাল বটবৃক্ষের নাম।

সেই সৌভাগ্য অনেক আগেই হারাতে হয়েছে। খুব অল্প বয়সে আমাকে বাবার শাসন, আদর, স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে।

আমি যখন ৩য় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাকে হারাতে হয় বাবা নামের মায়া ভালোবাসায় ঘেরা বটবৃক্ষকে। আমার বাবার সাথে আমার খুব বেশী স্মৃতি নাই।

খুব কম সময়ের জন্য উনাকে কাছে পেয়েছি। যতোটুকু সময়ে পেয়েছি তার মধ্যে মনে পড়ার মত খুব কম স্মৃতি আমার আছে।

শুধু এটা জানি আমারও এমন একজন মানুষ ছিলো যার জন্য এখনো আমার বুকের কোণে খালি খালি লাগে।

স্কুলে যখন সবার বাবা তার ছেলেকে স্কুলে দিয়ে যেত তখন আমি একা একা ব্যাস্ত রাস্তা পার হয়ে স্কুলে প্রবেশ করতাম। আবার যখন স্কুল ছুটি হতো সবার বাবা-মা এসে উনাদের সন্তান কে আদর করে বাসায় নিয়ে যেতো আর আমি অনেক ক্লান্তি নিয়ে বাসায় যেতাম। স্কুলের যেকোন অনুষ্ঠানে প্রত্যেক সন্তানের বাবা উপস্থিত হতো তার সন্তানকে পাশে নিয়ে বসতো আর আমাকে তখন একটা টেবিলের এক কোণে চুপ করে বসে থাকতে হতো।

বাবা
বাবা ছাড়া বড্ড একা আমরা।

এভাবে পার হয়ে যায় স্কুল জীবন। যখন স্কুল জীবন পার হয় কলেজে পা রাখি তখন বাবার অভাবটা আরো বেশী করে বুঝার শুরু করি।

বাবা শুধুই যে ভালোবাসা, আদর, স্নেহে, শাসন করার জন্য তাই নয় বাবা হচ্ছে আর্থিক যোগান দাতা।

কলেজে সবাই প্রতিদিন নতুন নতুন জামা পড়ে আসে আর আমি একই জামা পড়ে পরের দিনেও কলেজে যেতাম।

সবার মাঝে যখন প্রতিযোগিতা দামী ঘড়ি, দামী জামা কাপড়, দামী জুতা কিনার তখন আমি পরের মাসের খাবারের চিন্তা করতাম।

বাবা
বাবার মত কেউ কি আমাদের অভাব গুলো পূরণ করতে পারবে ?

সত্যি বাবা না থাকলে একটা সন্তান কে অনেক কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয়।

এখনো স্বপ্ন দেখি এখনো ভাবি যদি আরেকটা বারের জন্য উনাকে পেতাম বুকের সবটা দিয়ে খুব শক্ত করে চেপে জড়িয়ে ধরতাম।

আর বলতাম বাবা তখন তোমার চলে যাওয়াটাই যে শেষ যাওয়া সেটা বোঝার ক্ষমতা তখনও আমার হয়নি।

বাবা সবচেয়ে আপনজন, বাবা মানে নির্ভরতার সিঁড়ি, বাবা মানে প্রখর রোদে ছায়া দেয়া খুব উঁচু বটবৃক্ষ যেখানে ক্লান্ত পরিবার আশ্রয়ের জন্য মাথা গোঁজে।
ভালো ভাবে কথা বলার আগেই সকল শিশুই আধো আধো স্বরে বা-বা বলে ডাকা শুরু করে মায়ের কোলে থেকেই।

সারা দিন ব্যাস্ততার পর কর্মস্থল থেকে বাবা ফিরলে জায়গা করে নেয় তার কোলে। তারপর হাত দিয়ে ইশারা দেয় ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে।

ক্লান্ত বাবাও পরম আনন্দে তার সন্তানের ইচ্ছে পূরণ করতে উঠে পড়ে লাগে তখন বাবা ভুলে যায় তার সারাদিনের ক্লান্তির কথা।

সন্তান যখন এক পা দুই পা করে হাঁটি হাঁটি হতে যাচ্ছে তখন বাবার হাত ধরে বাড়ির আঙ্গিনায় হেটে বেড়ায়।

বাবা নিজের কতশত স্বপ্নকে স্বপ্ন রেখে দিয়ে সন্তানকে কতশত নতুন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথ দেখিয়ে যায়।

এই মানুষটা সারাজীবন শুধু ত্যাগ করেই যায় বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা না করে।

বাবা নিয়ে এই গানটা সত্যি সব মরে যাওয়া ইচ্ছে কে আবার জাগ্রত করে —

চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবী তোমার
ইজিচেয়ারটাও আছে, নেই সেখানে অলস দেহ শুধু তোমার
আযানের ধ্বনি আজো শুনি, ভোরে ভাঙ্গাবেনা ঘুম তুমি জানি
শুধু শুনিনা তোমার সেই দরাজ কন্ঠে পড়া পবিত্র কোরআনের বানী…
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা তোমার মত কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কতরাত কতরাত দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা মানিক কোথায় আমার ওরে বুকে আয়॥

বাবা
তুমি সাথে থাকলে আমার কোন ভয় লাগে না বাবা।

বাবা শব্দটা কানে আসলেই কেমন জানি একটা ভালোবাসার অনুভূতির সাড়া জাগে।

বাবা মানে সাধারণ একজন মানুষ নয় বাবা মানে এক পৃথিবী ত্যাগের প্রতীক। নিজের সুখ কে বিসর্জন দিয়ে, নিজের চাহিদাকে মাটি চাপা দিয়ে, নিজের মনের ইচ্ছে গুলোকে মনের ভিতর লুকিয়ে রেখে হাসিমুখে পরিবারের সবার চাহিদা মেটানো যন্ত্র মানব হচ্ছে বাবা।

সবার মুখে হাসি ফুটানো, সবাই কে আগলে রাখা, সবার মাথার উপর বটবৃক্ষের মত ছায়া হয়ে থাকা এটাই যেনো বাবা নামের যন্ত্র মানবের আত্মার সুখ।

বাবা হলো একটা পরিবারের খুঁটি যতই ঝড় তুফান আসুক শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সবাই নিরাপদে রাখা।

সুখে থাকুক সকল বাবা তাঁর মানিকদের নিয়ে।

লেখক- বাবা হারা এক মানিক।

2 thoughts on “বাবা (যন্ত্র মানব) বা জনক, সকল সুখের মূল যিনি”

    • বাবা এমন একজন মানুষ যার ভালোবাসা আমরা খুব কাছে থেকেও বুজতে পারিনা।

      Reply

Leave a Comment