লিভারের যত্ন

দেহের সর্ববৃহৎ অঙ্গের নাম লিভার। শরীরের প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে লিভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যন্ত্র বা মেশিনের মত আমাদের শরীর চলে শক্তির সাহায্যে। এ শক্তির উৎস হচ্ছে খাদ্য। আমরা যা খেয়ে থাকি তা সরাসরি শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। খাবার গুলো লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে জমা থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কোষে কোষে পৌঁছে শক্তি উৎপন্ন করে। লিভারে পিত্ত তৈরি হয়, পিত্ত এক প্রকার ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকে সহায়তা করে। তাই লিভার কে বলা হয় “পাওয়ার অফ হাউজ”। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোন বিষাক্ত জিনিস শরীরে প্রবেশ করলে তা বিষমুক্ত করে। প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, ঔষধ, গ্লাইকোজেনের সঞ্চয় বা অন্যান্য রাসায়নিক বিশুদ্ধ করনে লিভার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। লিভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন উৎপন্ন করে।

লিভার জনিত রোগ গুলো নাম

লিভার জনিত রোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। সাধারণত লিভারে যে রোগ গুলো হয়ে থাকে যেমন– লিভারের ফোঁড়া, পিত্তথলি বা পিত্তনালীর রোগ, লিভার ক্যান্সার, ভাইরাল হ্যাপাটাইটিস যা জন্ডিস নামে পরিচিত, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি।

লিভার সমস্যার লক্ষণ

অনেকে দেখা যায় প্রস্রাব বা পায়খানার রং ও প্রবাহ খেয়াল করেন না, বিশেষজ্ঞদের মতে এটা লক্ষ্য করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন ধরুন প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় ও ফেনাযুক্ত হয় এবং পায়খানা পাতলা ও ম্লান রঙের হয়ে থাকে তাহলে লিভারের পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এ গুলো লিভারে জনিত সমস্যার লক্ষণ। অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহনের পর এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হয়। পাশাপাশি বমি বমি ভাব হয়ে থাকলে লিভার ডিসিসের লক্ষণ এবং বুঝতে হবে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পিত্ত সংক্রান্ত সমস্যায় জিহ্বায় হলদে ভাব দেখা যায়। এ গুলো ছাড়াও জন্ডিস, পিত্ত পাথুরি, হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস জনিত কারণে  জিহ্বা হলদে ভাব দেখা দিয়ে থাকে। এমন উপসর্গ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে লিভার জনিত কোন সমস্যা হয়েছে। নিম্নে আরো কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো–

১। চোখের উপরে ব্যাথা হয়ে থাকে অথবা বিবর্ন হয়ে যাওয়া।
২। ফ্যাকাসে পায়খানা হওয়া।
৩। পিত্তথলিতে সমস্যা ও খাবার পর মুখে তিক্তকর ভাব।
৪। খাবার পর পেট ব্যাথা করা।
৫। জন্ডিসের সময় হঠাৎ হঠাৎ বমির ভাব বা তীব্র ভাবে বমি হওয়া।
৬। অনেক বেশী অবসন্নতা অনুভব করা।
৭। পা ফুলে যাওয়া।
৮। লিভারের সমস্যা দেখা দিলে জিহ্বায় কালচে আবরনের তৈরি হয়।
১০।  খাবার গ্রহণে অনিচ্ছা, অনীহা অথবা দুর্বলতা, মাঝে মাঝে জ্বর জ্বর ভাব। জ্বরের মাধ্যমেও লিভারের রোগের সূত্রপাত হয়ে থাকে।

লিভার রোগ প্রতিরোধে করণীয়

১। ঝুঁকিপূর্ণ  কাজ থেকে বিরত থাকুন (যেমন অনিরাপদ যৌনতা, একই সুঁই বা সিরিজ একাদিক বার ব্যাবহার করা)।
২। অ্যালকোহল ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। অ্যালকোহলের কারণে অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
৩। ব্লেড, রেজার, ব্রাশ, খুর এ ধরনের নিত্য ব্যাবহারিত জিনিস এক জনের অধিক ব্যাবহারের অভ্যাস পরিহার করুন।
৪। হেপাটাইটিস বি-এর টীকা দিতে হবে।
৫। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রন রাখতে হবে। কারণ স্থূলতা লিভারে চর্বি জমায়।
৬। চর্বি যুক্ত খাবার কম খেতে হবে। কারণ শর্করা জাতীয় খাবারে আধিক্যের কারণে লিভার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
৭। বেশী বেশী ফলমূল শাকসবজি খেতে হবে।
৮। বিশুদ্ধ পানি পান করুন ও খাবারে লবন গ্রহণ করুন।

৯। ডায়াবেটিস যাতে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
১০। নিজেকে সবসময় পরিস্কার পরিছন্ন রাখুন।
১১। ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখুন কারণ উচ্চ রক্তচাপ লিভারের কার্যক্ষমতা কে বাধাগ্রস্থ্য করে।
১২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন (যেমন- হাঁটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি)।
 

Leave a Comment