সারাদেশে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব, জেনে নিন এই নতুন রোগের সম্পর্কে

চিকুনগুনিয়া একটি মশা বাহিত রোগ।২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় চিকুনগুনিয়া রোগটি দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি এ রোগটি ব্যাপক হারে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক হচ্ছে এডিস মশা যা ডেঙ্গু জরের বাহক। মানব দেহ থেকে মশায় আর মশা থেকে মানব দেহে ছড়িয়ে থাকে। তবে খুব ভয়ের কিছু নেই কারণ চিকিৎসকরা বলেছেন চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গু জ্বরের মত প্রাণঘাতী না। আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার আপনার এ রোগটি হয়েছে কিনা আর যখনি আপনার শরীরে চিকুনগুনিয়া ধরা পরবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর অনেক বেশী বিশ্রাম নিতে হবে। চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীকে কোনভাবে যাতে আন্টিবায়েটিক দেওয়া না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

চিকুনগুনিয়া কি ?

এ রোগটি প্রথমে তানজানিয়া নামে আফ্রিকান একটি দেশে দেখা যায়।তাই এ রোগের নাম দেওয়া হয় চিকুনগুনিয়া। চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে ঐ দেশের ভাষা থেকে যার অর্থ বেঁকে যাওয়া। চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগিদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেঁকে যায়। তাই এমন নাম করণ করা হয়েছে। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ।এই ভাইরাস রক্তের লোহিত কণিকা যেমন ফাইব্রোব্লাস্ট মেকরোফেজ নামক রক্ত কণিকাকে আক্রমণ করে। ভারতের কলকাতা থেকে এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে আসে যদিও এটির উৎপত্তি আফ্রিকায়। এখন এ রোগটি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে বিস্তার লাভ করছে। রাজধানী ঢাকায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ গুলো

১। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীরে লাল দাগ দেখা দেওয়া। এ লাল দাগ গুলো প্রথম দিকে অনেক বেশী চুলকায় ।
২। হাঁটু এবং পায়ের পাতা অনেক ব্যাথা হয় যার কারণে হাঁটা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।
৩। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসহ্যকর ব্যথা হয়। হাত পা বেঁকে আসে। পায়ের আঙ্গুল, হাতের আঙ্গুল ব্যথার কারণে অনেক বেশি ফুলে যায়।

৪। অনেক বেশী তাপমাত্রা বেড়ে যায় যার পরিমাণ ১০৪ ডিগ্রি হবে।
৫। অনেক জনের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ড ব্যথা হতে পারে। তাই বিছানা থেকে উঠা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

 

চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর চলফেরা অর্থাৎ হাঁটা একদম নিষেধ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজনে হাঁটতে হয় তবে সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। উঁচু কোন জায়াগায় উঠানামা নিষেধ। উপরে লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে দেখা গেলে বুঝে নিতে হবে আপনি চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। খুব বেশী ভেঙ্গে পড়বেন না। কারণ চিকুনগুনিয়া জ্বর সাত থেকে আট দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আর এ জন্য সাত থেকে আটদিন শরীরের বিভিন্ন অংশে অনেক বেশী ব্যথা থাকতে পারে। এ ব্যথা এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। মাঝে মাঝে অনেক চিকিৎসক প্যারাসিট্যামল খাওয়ার পরামর্শ দেন। এখন পর্যন্ত জ্বর কমানোর জন্য কোন ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। ব্যথা কমানোর জন্য কোনভাবেই আন্টীবায়েটিক সেবন করা যাবে না। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যু ঝুঁকি নেই। চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলে খুব বেশী উদ্বিগ্ন না হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে
১। ঘরের আশেপাশে ফুলের টবে বা ড্রেনে জমে থাকা পানি প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।

২। মশারী ব্যবহার করতে হবে।

৩। বাসার আশেপাশে ময়লা আবর্জনা স্তূপ থাকলে তা অনেক দিন জমিয়ে না রেখে আগুনে পুড়ে ফেলা উচিৎ, বা গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে।

ঘর বাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে

৪। ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।

৫। সরকারকে  জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে এবং দেশের পরিবশের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

 

আপনি পারেন আপনার নিজের আর চারপাশের মানুষ গুলোকে এই রোগ থেকে বাঁচাতে। কারণ একটু সচেতন হলে এ রোগের সংক্রমণ কমে যাবে সবাই যদি একসাথে এগিয়ে না আসি তাহলে এই রোগটি আরও খারাপ ভাবে ছড়িয়ে পড়বে।

 

 

Leave a Comment