মুখের দুর্গন্ধ দিয়ে অবহেলা নয়, এর মাধ্যমে অনেক রোগ ধরা যায়

মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে আমরা অনেকেই বিভিন্ন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। দেখা যায় অনেক সময় আপনি ঠিক মত ব্রাশ করেও মখে দুর্গন্ধ পাচ্ছেন। এমন অবস্থায় অন্যের সাথে কথা বলতেও ভয় লাগে এই বুঝি আমরা মুখের দুর্গন্ধ পাবে!

আপনি কি জানেন মুখের দুর্গন্ধ শুধু দাঁতের কারণে হয় না। অনেক সময় মুখের গন্ধ দিয়ে শারীরিক অসুস্থতা ধরা পড়ে।

যদি মুখের দুর্গন্ধ কিছুটা প্রসাবের মতো গন্ধ হতে থাকে তাহলে সতর্ক হয়ে যান। কারণ এই ধরনের দুর্গন্ধ বলে দেয় আপনার টাইপ-১ ডায়বেটিসের সমস্যা হয়েছে।

এই গন্ধের মূল কারণ হচ্ছে ডায়বেটিসের কারণে দেহে ইনসুলিনের অভাব।

আপনার নিঃশ্বাসে যদি দুর্গন্ধ পান তাহলে বুঝে নেবেন আপনার সাইনাসে সমস্যা রয়েছে।

এর কারণ হচ্ছে নাকে ও গলায় মিউকাস জমে থাকা।

টক দুধের মতো টক টক ধরনের গন্ধ পান আপনার নিঃশ্বাসে আপনার খাবারে প্রোটিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেশি হয়েছে।

এর কারণ হচ্ছে কিটোনের ভাঙন।

যদি আপনার নিঃশ্বাসে পচে যাওয়া মাংসের মতো দুর্গন্ধ পান তাহলে বুঝে নেবেন আপনার টনসিলের সমস্যা হয়েছে।

টনসিলের কারণে সালফার উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়া অধিক জন্ম নিচ্ছে যার কারণেই নিঃশ্বাসে এই ধরনের দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে।

আপনার নিঃশ্বাসে দিনের প্রত্যেকটা সময় যদি সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যেমন গন্ধ থাকে তেমন গন্ধ পান তাহলে আপনার মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে।

মুখে ভেতরের স্যালিভা বা লালা শুকিয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হতে থাকে যা এই ধরনের দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

যদি আপনার নিঃশ্বাসে আঁশটে গন্ধ হয় তাহলে বুঝে নেবেন আপনার কিডনি সমস্যা হয়েছে।

কিডনিতে সমস্যা হলে এবং কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয় যা এই ধরনের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।

খুবই বাজে ধরনের দুর্গন্ধ এবং বাথরুমের মতো গন্ধ পেলে বুঝে নেবেন আপনার মাড়িতে ইনফেকশন হয়েছে।

সুতরাং সাবধান। শারীরিক সমস্যা যদি বুঝে নিতে পারেন নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

দিনে অবশ্যই দুইবার সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করুন। মাউথ ওয়াশ এবং ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। যদি সম্ভব হয় প্রতিবার খাবার গ্রহণের পড়ে দাঁত ব্রাশ করুন।

নিয়মিত দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা পরিষ্কার করুন

পর্যাপ্ত পানি পান

নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের জন্য শুধু উপকারীই না, এটা প্রয়োজনীয়। শুকনো মুখেই ব্যাকটেরিয়াগুলো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

আর পানি খেলে গন্ধযুক্ত বিশেষ সালফার যৌগ অনেকটাই পানিতে মিশে যায়। ফলে গন্ধও কমে।

তাজা সবজি ও ফল খান

মৌসুমি তাজা ফল ও সবজি জুস করে না খেয়ে চিবিয়ে খান। এতে শরীরে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান হবে তেমনি তা মুখের গন্ধও দূর করবে।

ফল-সবজি খেলে মুখে লালার প্রবাহ বাড়ে বলে মুখ ভেজা থাকে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর্বল হয়ে যায়।

কফি খাওয়া কমান

বেশি বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা কমান। কফি জিহ্বার ওপর প্রলেপ ফেলে দেয় যা অক্সিজেনের চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এটা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যাফেইন প্রয়োজন হলে আপনি চা পান করুন।

চিনিহীন চুইংগাম

মুখের গন্ধ থেকে বাঁচতে তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে চুইং গাম চিবাতে পারেন। মুখের ভেতরটা ভেজা রেখে লালার প্রবাহ চালু রাখতে সাহায্য করবে এটা।

তবে, চিনি আছে এমন মিন্টজাতীয় গাম না চিবানোই ভালো।

কারণ চিনি দাঁতে লেগে থাকলে তা আপনার এনামেল ক্ষয় করবে।

দই খান

বেশীর ভাগ মানুষের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে একবার কিছুটা দই খাওয়া হজমে সহায়ক এবং তা মুখ থেকে এমন গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে।

মুখের এমন ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও খুবই সহায়ক দই।

ভিটামিন প্রয়োজন

ভিটামিন-ডি মুখের এমন ব্যাকটেরিয়ার জন্য ক্ষতিকর। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারে ভিটামিন-ডি আছে আর সূর্যালোক তো আছেই। ভিটামিন-সির পর্যাপ্ত জোগানও আপনার মুখ সতেজ রাখবে।

আর এ দুটো ভিটামিন মুখে গন্ধের সমস্যার পাশাপাশি আপনার মুখের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয়।

আপনার যদি এসিডিটি থাকে তবে ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না, রাতে ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে খাবার খাবেন, রাতে ঘুমানোর আগে হাঁটাহাঁটি করবেন।

তামাক বর্জন করুন

সিগারেটই হোক বা জর্দা দেওয়া পান। যেকোনো তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন মুখে গন্ধসহ অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। ফলে, এমন অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করুন।

 

1 thought on “মুখের দুর্গন্ধ দিয়ে অবহেলা নয়, এর মাধ্যমে অনেক রোগ ধরা যায়”

  1. তা ছাড়া এটা এমন একটি সমস্যা, যা লোক সমাজে আপনাকে অনেক হেয় করে দিতে পারে।

    Reply

Leave a Comment