আমরা জীবনের বেশীর ভাগ সময় অনেক হতাশাগ্রস্থ্য হতে থাকি আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রত্যাশিত কারণে। আর আমরা চিন্তা করতে থাকি আমাদের জীবন আমাদের শুধু শোষণ করে তাই আমরা অনেক বেশী ভেঙ্গে পড়ি। প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু সমস্যা থেকে থাকে কোন মানুষ পরিপূর্ণ না। যদি আমরা এটা বোঝার চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের পূর্বের অবস্থার চেয়ে খারাপ এবং আরও বেশী খারাপ হতে থাকবে। তাই এমন কিছু উক্তি পড়তে পারেন যা বিভিন্ন মনীষী আর গুনীজেনরা বলে ছিলেন। এই উক্তি গুলো পড়লে আপনার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
সব মানুষের জীবনেই অপূর্নতা থাকবে। অতি পরিপূর্ন যে মানুষ তাকে জিজ্ঞেস করেলেও সে অতি দুঃখের সাথে তার অপূর্নতার কথা বলবে। অপূর্নতা থাকে না শুধু বড় বড় সাধক আর মহা পুরুষদের।
– হুমায়ূন আহমেদ
সফল্যের মূলমন্ত্র হলো যা আমরা ভয় পাই তার উপর নয় বরং আমরা যা চাই তার উপর আমাদের চেতন মনকে কেন্দ্রীভুত করা।
-ব্রায়ান ট্রেসি
সাফল্য অনেকটা উস্কানি দেয়া শিক্ষকদের মত। এটা দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোকদের চিন্তা করতে বাধ্য করায় যে তারা কখনো হারবে না।
-বিল গেটস
যদি আমাকে একটি সমস্যা সমাধানের জন্য এক ঘন্টা বেঁধে দেয়া হয়, আমি তা ৫৫ মিনিট সমস্যা নিয়ে চিন্তা করি এবং বাকী ৫ মিনিট সমাধানটা নিয়ে চিন্তা করি।
– আলবার্ট আইনস্টাইন
দুঃখ গুলোকে অনেক বড় মনে হয়, সুখ গুলোর চেয়ে। কিন্তু একটি সফলতাকে অনেক বড় মনে হয়, হাজার ব্যার্থতার চেয়ে।
– সুজন মজুমদার
যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে ।
– এ পি জে আবুল কালাম
বোকা মানুষ গুলো হয়তো অন্যকে বিরক্ত করতে জানে। কিন্তু কখনো কাউকে ঠকাতে জানে না।
-হুমায়ূন আহমেদ
যখন তোমার পকেট ভর্তি টকা থাকবে তখন শুধু মাত্র তুমি ভুলে যাবে যে “তুমি কে” কিন্তু যখন তোমার পকেট ফাঁকা থাকবে অখন সমগ্র দুনিয়া ভুলে যাবে “তুমি কে”!
– বিল গেটস
যারা নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তারা কখনো অন্যের দুঃখ কষ্টকে উপলদ্ধি করতে পারে না।
-রেদয়ান মাসুদ
আমি ভাবতাম, আমি গরিব। তারা বলল, আমি গরিব নই, অভাবগ্রস্ত। তারা বলেছিল, নিজেকে অভাবগ্রস্ত ভাবাটা আত্মপ্রবঞ্চনা। আমি বঞ্চিত। ওহ্, না। ঠিক বঞ্চিত না, স্বল্প অধিকারপ্রাপ্ত। তারপর তারা বলল, স্বল্প অধিকারপ্রাপ্ত কথাটা ব্যবহারজীর্ণ। আমি হলাম সাফল্যের পথে বাধাপ্রাপ্ত। আমার কাছে এখনো একটা পয়সাও নেই। কিন্তু আমার শব্দভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
– জুল ফেইকার
নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্নকে আপনার আত্মার সন্তান হিসেবে লালন করুন, এগুলোই আপনার চূড়ান্ত সাফল্যের নকশা হবে।
-নেপোলিয়ন হিল
যে পুরুষ কখনো দুঃখকষ্ট ভোগ করেনি এবং পোড় খাওয়া মানুষ নয়, মেয়েদের কাছে সে তেমন বাঞ্ছনীয় না। কারণ দুঃখকষ্ট পুরুষকে দরদি ও সহনশীল করে তোলে।
– ডেনিস রবিনস
আপনি যদি গরীব হয়ে জন্ম নেন তাহলে এটা আপনার দোষ নয়, কিন্তু যদি গরীব থেকেই মারা যান তবে সেটা আপনার দোষ।
-বিল গেটস
দ্রুত কাজ করে অন্যকে অতিক্রম করুন। আপনি যদি সেটি না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি খুব দ্রুত কাজ করতে পারছেন না।
-মার্ক জাকারবার্গ
যে কাজে আপনি ব্যার্থ হয়ে হতাশাগ্রস্থ্য তা এড়িয়ে না চলে তার সমাধান খুঁজে বের করুন। আবার চেষ্টা করুন। ব্যার্থতা আসলে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। সেটাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।
“বেনিংটন” নামটার সাথে এখন তো সবাই পরিচিত। যারা চেষ্টারের গান শোনেনি তারাও এখন খুব ভালো করে চেনেন। আমি লিঙ্কিন পার্কের গান শুনেছি যখন আমার বয়স ১৪/১৫। যখন চেষ্টারের গান শুনতাম সত্যি বলতে জানতাম না চেষ্টার কে। লিঙ্কিন পার্ক ব্যান্ডের নামটাই শুধু পরিচিত ছিল আমার কাছে। রকস্টার আর রক গান কি তা এই গায়ক আমাদের বুঝিয়েছে। অনেক ধরনের গান আছে যেগুলো গাইতে কণ্ঠে অনেক সুর থাকতে হয় কিন্তু রকগান গাওয়ার জন্য শুধু কণ্ঠ থাকলে হয়না থাকতে হয় অসম্ভব আবেগ।
হিন্দি “রকস্টার” সিনেমা তে দুইটা ডায়ালগ আছে প্রথমটার বাংলা করলে দাড়ায়- “ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় থেকেই গান আসে, যখন হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখনি বাজে গানের ঝঙ্কার”। আর দ্বিতীয়টা- “যতদিন জীবনে কষ্ট না আসে কেউ জীবনে বড় হতে পারে না”।
Rockstar Movie সূত্রঃ lifenlesson.com
কথাগুলো যেন মিলে যায় প্রয়াত চেস্টার সাথে। তাঁর জীবনের আদ্যোপান্ত লক্ষ্য করলে বোঝা যায় কতটুকু কষ্টের ভেতর দিয়ে পার করেছে ৪১ বছর। ৭ বছর বয়সে প্রথম ধাক্কা পায় জীবন থেকে। যৌন নিপীড়নের শিকার হন চেষ্টার এবং তা চলতে থাকে কয়েক বছর ধরে, শিশু মনে ভীষণ দাগ কাটে ঘটনাটি। স্কুলের বন্ধুদের দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হন তিনি। ১১ বছর বয়সে দেখেন বাবা মার বিচ্ছেদ। যার শৈশব এতো কষ্টের ছিল সে কি করে জীবনে ভালো থাকবে। একাকীত্ব গ্রাস করে তাঁকে। বাবা মার বিচ্ছেদের পর চেষ্টার তাঁর বাবার সাথেই থাকতে লাগলেন। শৈশব কালে তিনি কোন প্রকার মাদকের শরণাপন্ন হননি। অভিভাবক, বন্ধুহীন এবং একাকীত্ব জীবনের জন্য মাদকদ্রব্য হয়ে যায় তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। একসময় তিনি এ মরণ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসেন কিন্তু পরবর্তিতে নিজের কাছে হেরে যান আবার একই পথ বেছে নেন তিনি। তার জন্মস্থান এরিজোনা থেকে একসময় তিনি লস এঞ্জেলেসে চলে আসেন।
Rockstar Chester Bennington সূত্রঃ pinterest.com
চেস্টার-এর গান নিয়ে পথ চলা
নব্বইয়ের দশকে লিঙ্কিন পার্কের সাথে যুক্ত হয়ে অনেক যশ কামান, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন চেস্টার। তার প্রথম এ্যালবামের নাম ছিল “হাইব্রিড থিওরি”। এই এ্যালবামের সাড়া জাগানো গান গুলো হচ্ছে ‘’ক্রলিং’’, ‘’ওয়ান স্টেপ ক্লোজার’’, ‘’ইন দ্যা এন্ড‘’ এবং ‘’পেপারকাট’’ যা অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সফলতার স্বর্ণ শিখরে এসেই পুনরায় মাদকাসক্ত জীবনে ফিরে যান তিনি। আবার ২০০৬ সালে ত্যাগ করেন। ধরা হয় মাদকতা আর একাকীত্ব তার আত্মহত্যার কারণ। হয়তবা সে সুন্দর জীবন পেতে পারত কিন্তু অভাব ছিল ভালবাসার।
চেস্টার-এর বৈবাহিক জীবন
মানুষটির জীবনে দরকার ছিল অঢেল ভালবাসার। ১৯৯৬ সালে ২৩ বছর বয়সে সামান্থা অলিট নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিচ্ছেদ তো চেস্টার এর সঙ্গী, ২০০৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাদের। অনেক কষ্ট পান তিনি। ২০০৬ সালে তালিন্দা বেন্টলিকে বিয়ে করেন। তাঁর তিন জন সন্তান রয়েছে তালিন্দার সাথে। কিন্তু তারপরও সুখ আসেনি তাঁর জীবনে হতাশা থেকে তিনি উঠে দাড়াতে পারেননি। চেষ্টারের লিখিত অনেক গান আছে। ২০১৭ তে প্রকাশ পাওয়া “হেভি” গানের কথাগুলো ছিল বেনিংটনের হৃদয়ের কথা।
Linkin Park “Heavy” featuring Kiiara সূত্রঃ breatheheavy.com
I’m holding on
Why is everything so heavy?
Holding on
To so much more than I can carry
জীবন ধারন করা তাঁর জন্য হয়ে গিয়েছিল অনেক ভারি, নিজে যতটুকু বহন করতে পারে তাঁর চেয়েও যেন অনেক ভারি ছিল সব কিছু। গানটির ভিডিওতে দেখা যায় চেষ্টার নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করছেন। ক্লান্ত হয়ে যান এক পর্যায়ে। কিন্তু সেই যুদ্ধের শেষ হয়নি।
“হাফ এওয়ে রাইট” গানটির কথা তাঁর মানসিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। প্রথম লাইন বাংলানুবাদ করলে দাড়ায়- “আমি নিজের সাথে চিৎকার করি যখন আর কেউ থাকে না লড়াই করার জন্য।”
I scream at myself when there’s nobody else to fight
I don’t lose, I don’t win, if I’m wrong, then I’m halfway right
“নোবডি কেন সেভ মি” গানটিও বেনিংটনের লেখা। খেয়াল করে দেখুন কি বলতে চেয়েছেন তিনি। এটা তাঁর সর্বশেষ অ্যালবামের একটি অন্যতম জনপ্রিয় গান।
I’m holding up a light
Chasing out the darkness inside
‘Cause nobody can save me
এমন অনেক গানেই খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর হৃদয়ের আর্তনাদ। খুঁজে দেখতে পারেন। পারিবারিক ভাবে সুখী ছিলেন না সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। ভালবাসার বন্ধন যদি তীব্র আর জোরালো হত তাহলে হারিয়ে যেতে পারতেন না তিনি। তাঁর প্রতিটি গানে বাঁচার ইচ্ছে ছিল কিন্তু কাউকে হয়তো পাননি সাহায্যকারী হিসেবে। গান ই ছিল তাঁর বাঁচার অবলম্বন। তাই চেষ্টার বেনিংটনকে এখন পাওয়া যাবে তাঁর গানের ভেতর। সঙ্গীত জীবনে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরুস্কার পাওয়া এই কিংবদন্তী মানুষ হিসেবে অসাধারণ ছিলেন।
“পেটা” নামক প্রাণী সংরক্ষণ মূলক সংস্থাটির সাথে উতপ্রত ভাবে জরিত ছিলেন, উনি মাছমাংস খাওয়া বন্ধ করে দেন। শরীরে উল্কি আঁকেন প্রাণীদের জন্য।
ছোট বেলার বেনিংটন সূত্রঃ pinterest.com
চেস্টার- এর শৈশব
শৈশবে যেই মানুষ গুলো নির্যাতনের শিকার হয় তারা বড় হয়ে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু চেস্টার যেন অন্য ধাতুর তৈরি এক মহামানব। যেই ছেলেটির দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন তাঁর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি পরে জানতে পারেন যে ওই ছেলেটিও তাঁর মত নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। মানুষদের অনেক ভালবাসা দিয়েছেন যতোটুকু না পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর লিঙ্কিন পার্কের একটি খোলা চিঠিতে লেখা ছিল “আমাদের জীবনে তুমি হাসিখুশি এনে দিয়েছ। তোমার চলে যাওয়া আমাদের স্তব্ধ করেছে, হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে”।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যতক্ষণ আমি আমার বাইরে থাকি আমি ভালো থাকি কিন্তু যখন আমি আমার ভেতর থাকি আমি ভালো থাকি না। আমার হতাশা আমাকে ভালো থাকতে দেয়না, এটা শুধুই আমাকে নিচে নিয়ে যায়। আমি আমার সাথে সব সময় যুদ্ধ করি, যুদ্ধে হেরে গেলে আমি হয়তো আর বাঁচব না।”
পরিবারের শাথে বেনিংটন সূত্রঃ pinterest.com
পারিবারিক ভাবে সুখে না থাকলেও পরিবারে জন্য তিনি সবটা করার চেষ্টা করেছেন। ২.৫ মিলিওন ডলারের একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন গত মে মাসে। মে মাসের ১৮ তারিখে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিস আত্মহত্যা করে মারা যান।
চেস্টার সব দুঃখ সয়েছেন, হয়তো এই দুঃখটা তাঁকে আর ঠিক থাকতে দেয়নি। আমার মতে তাঁর আত্মহত্যার পেছনে এটাও একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। ২০ জুলাই তাঁর গৃহকর্মী তাঁকে ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখে ড্রাইভারকে বলেন। ড্রাইভার ৯১১ এ সাহায্যের জন্য ফোন করেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
প্রিয় বন্ধু ক্রিসের জন্মদিনে মারা যান তিনি। সব কিছু কি তাহলে তাঁর পরিকল্পনায় ছিল?
“চেস্টার বেনিংটন” তোমার শুধু শরীরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তুমি চিরদিন বেঁচে থাকবে ভক্তের হৃদয়ে, বেঁচে থাকবে তোমার গানের কথা আর সুরে। আর তোমাকে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ করতে হবে না। যেখানে আছো ভালো থেকো। আর কোন কষ্ট যেন তোমাকে ছুঁতে না পারে। আত্মহত্যা নামক যে ভয়ঙ্কর কাজ তুমি করেছ তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ক্ষমা করুন সেই প্রার্থনা করি।
চেস্টারের একটা শখ আছে। মোটে একটাই শখ বেচারার। সেটা হল নতুন জুতা। এটার ভেতরেই আনন্দ খুঁজে পেত সে। কেউ নতুন জুতা উপহার দিলে অনেক খুশি হত।
Chester bennington quotes
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। আমার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া একমাত্র ছোট বোনের জন্মদিন ছিল ২০ জুলাই। ও তোমার মস্ত বড় ভক্ত। এই তারিখটাকে অনেক বেশি মূল্যবান করে ফেলেছ তুমি। ভালো থেকো বন্ধু। যত দিন রক গান থাকবে এই পৃথিবীতে তার চেয়েও বেশি দিন মনে পড়বে তোমার কথা।