“বেনিংটন” নামটার সাথে এখন তো সবাই পরিচিত। যারা চেষ্টারের গান শোনেনি তারাও এখন খুব ভালো করে চেনেন। আমি লিঙ্কিন পার্কের গান শুনেছি যখন আমার বয়স ১৪/১৫। যখন চেষ্টারের গান শুনতাম সত্যি বলতে জানতাম না চেষ্টার কে। লিঙ্কিন পার্ক ব্যান্ডের নামটাই শুধু পরিচিত ছিল আমার কাছে। রকস্টার আর রক গান কি তা এই গায়ক আমাদের বুঝিয়েছে। অনেক ধরনের গান আছে যেগুলো গাইতে কণ্ঠে অনেক সুর থাকতে হয় কিন্তু রকগান গাওয়ার জন্য শুধু কণ্ঠ থাকলে হয়না থাকতে হয় অসম্ভব আবেগ।
হিন্দি “রকস্টার” সিনেমা তে দুইটা ডায়ালগ আছে প্রথমটার বাংলা করলে দাড়ায়- “ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় থেকেই গান আসে, যখন হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখনি বাজে গানের ঝঙ্কার”। আর দ্বিতীয়টা- “যতদিন জীবনে কষ্ট না আসে কেউ জীবনে বড় হতে পারে না”।
কথাগুলো যেন মিলে যায় প্রয়াত চেস্টার সাথে। তাঁর জীবনের আদ্যোপান্ত লক্ষ্য করলে বোঝা যায় কতটুকু কষ্টের ভেতর দিয়ে পার করেছে ৪১ বছর। ৭ বছর বয়সে প্রথম ধাক্কা পায় জীবন থেকে। যৌন নিপীড়নের শিকার হন চেষ্টার এবং তা চলতে থাকে কয়েক বছর ধরে, শিশু মনে ভীষণ দাগ কাটে ঘটনাটি। স্কুলের বন্ধুদের দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হন তিনি। ১১ বছর বয়সে দেখেন বাবা মার বিচ্ছেদ। যার শৈশব এতো কষ্টের ছিল সে কি করে জীবনে ভালো থাকবে। একাকীত্ব গ্রাস করে তাঁকে। বাবা মার বিচ্ছেদের পর চেষ্টার তাঁর বাবার সাথেই থাকতে লাগলেন। শৈশব কালে তিনি কোন প্রকার মাদকের শরণাপন্ন হননি। অভিভাবক, বন্ধুহীন এবং একাকীত্ব জীবনের জন্য মাদকদ্রব্য হয়ে যায় তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। একসময় তিনি এ মরণ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসেন কিন্তু পরবর্তিতে নিজের কাছে হেরে যান আবার একই পথ বেছে নেন তিনি। তার জন্মস্থান এরিজোনা থেকে একসময় তিনি লস এঞ্জেলেসে চলে আসেন।
চেস্টার-এর গান নিয়ে পথ চলা
নব্বইয়ের দশকে লিঙ্কিন পার্কের সাথে যুক্ত হয়ে অনেক যশ কামান, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন চেস্টার। তার প্রথম এ্যালবামের নাম ছিল “হাইব্রিড থিওরি”। এই এ্যালবামের সাড়া জাগানো গান গুলো হচ্ছে ‘’ক্রলিং’’, ‘’ওয়ান স্টেপ ক্লোজার’’, ‘’ইন দ্যা এন্ড‘’ এবং ‘’পেপারকাট’’ যা অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সফলতার স্বর্ণ শিখরে এসেই পুনরায় মাদকাসক্ত জীবনে ফিরে যান তিনি। আবার ২০০৬ সালে ত্যাগ করেন। ধরা হয় মাদকতা আর একাকীত্ব তার আত্মহত্যার কারণ। হয়তবা সে সুন্দর জীবন পেতে পারত কিন্তু অভাব ছিল ভালবাসার।
চেস্টার-এর বৈবাহিক জীবন
মানুষটির জীবনে দরকার ছিল অঢেল ভালবাসার। ১৯৯৬ সালে ২৩ বছর বয়সে সামান্থা অলিট নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিচ্ছেদ তো চেস্টার এর সঙ্গী, ২০০৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাদের। অনেক কষ্ট পান তিনি। ২০০৬ সালে তালিন্দা বেন্টলিকে বিয়ে করেন। তাঁর তিন জন সন্তান রয়েছে তালিন্দার সাথে। কিন্তু তারপরও সুখ আসেনি তাঁর জীবনে হতাশা থেকে তিনি উঠে দাড়াতে পারেননি। চেষ্টারের লিখিত অনেক গান আছে। ২০১৭ তে প্রকাশ পাওয়া “হেভি” গানের কথাগুলো ছিল বেনিংটনের হৃদয়ের কথা।
I’m holding on
Why is everything so heavy?
Holding on
To so much more than I can carry
জীবন ধারন করা তাঁর জন্য হয়ে গিয়েছিল অনেক ভারি, নিজে যতটুকু বহন করতে পারে তাঁর চেয়েও যেন অনেক ভারি ছিল সব কিছু। গানটির ভিডিওতে দেখা যায় চেষ্টার নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করছেন। ক্লান্ত হয়ে যান এক পর্যায়ে। কিন্তু সেই যুদ্ধের শেষ হয়নি।
“হাফ এওয়ে রাইট” গানটির কথা তাঁর মানসিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। প্রথম লাইন বাংলানুবাদ করলে দাড়ায়- “আমি নিজের সাথে চিৎকার করি যখন আর কেউ থাকে না লড়াই করার জন্য।”
I scream at myself when there’s nobody else to fight
I don’t lose, I don’t win, if I’m wrong, then I’m halfway right
“নোবডি কেন সেভ মি” গানটিও বেনিংটনের লেখা। খেয়াল করে দেখুন কি বলতে চেয়েছেন তিনি। এটা তাঁর সর্বশেষ অ্যালবামের একটি অন্যতম জনপ্রিয় গান।
I’m holding up a light
Chasing out the darkness inside
‘Cause nobody can save me
এমন অনেক গানেই খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর হৃদয়ের আর্তনাদ। খুঁজে দেখতে পারেন। পারিবারিক ভাবে সুখী ছিলেন না সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। ভালবাসার বন্ধন যদি তীব্র আর জোরালো হত তাহলে হারিয়ে যেতে পারতেন না তিনি। তাঁর প্রতিটি গানে বাঁচার ইচ্ছে ছিল কিন্তু কাউকে হয়তো পাননি সাহায্যকারী হিসেবে। গান ই ছিল তাঁর বাঁচার অবলম্বন। তাই চেষ্টার বেনিংটনকে এখন পাওয়া যাবে তাঁর গানের ভেতর। সঙ্গীত জীবনে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরুস্কার পাওয়া এই কিংবদন্তী মানুষ হিসেবে অসাধারণ ছিলেন।
“পেটা” নামক প্রাণী সংরক্ষণ মূলক সংস্থাটির সাথে উতপ্রত ভাবে জরিত ছিলেন, উনি মাছমাংস খাওয়া বন্ধ করে দেন। শরীরে উল্কি আঁকেন প্রাণীদের জন্য।
চেস্টার- এর শৈশব
শৈশবে যেই মানুষ গুলো নির্যাতনের শিকার হয় তারা বড় হয়ে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু চেস্টার যেন অন্য ধাতুর তৈরি এক মহামানব। যেই ছেলেটির দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন তাঁর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি পরে জানতে পারেন যে ওই ছেলেটিও তাঁর মত নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। মানুষদের অনেক ভালবাসা দিয়েছেন যতোটুকু না পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর লিঙ্কিন পার্কের একটি খোলা চিঠিতে লেখা ছিল “আমাদের জীবনে তুমি হাসিখুশি এনে দিয়েছ। তোমার চলে যাওয়া আমাদের স্তব্ধ করেছে, হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে”।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যতক্ষণ আমি আমার বাইরে থাকি আমি ভালো থাকি কিন্তু যখন আমি আমার ভেতর থাকি আমি ভালো থাকি না। আমার হতাশা আমাকে ভালো থাকতে দেয়না, এটা শুধুই আমাকে নিচে নিয়ে যায়। আমি আমার সাথে সব সময় যুদ্ধ করি, যুদ্ধে হেরে গেলে আমি হয়তো আর বাঁচব না।”
পারিবারিক ভাবে সুখে না থাকলেও পরিবারে জন্য তিনি সবটা করার চেষ্টা করেছেন। ২.৫ মিলিওন ডলারের একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন গত মে মাসে। মে মাসের ১৮ তারিখে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিস আত্মহত্যা করে মারা যান।
চেস্টার সব দুঃখ সয়েছেন, হয়তো এই দুঃখটা তাঁকে আর ঠিক থাকতে দেয়নি। আমার মতে তাঁর আত্মহত্যার পেছনে এটাও একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। ২০ জুলাই তাঁর গৃহকর্মী তাঁকে ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখে ড্রাইভারকে বলেন। ড্রাইভার ৯১১ এ সাহায্যের জন্য ফোন করেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
প্রিয় বন্ধু ক্রিসের জন্মদিনে মারা যান তিনি। সব কিছু কি তাহলে তাঁর পরিকল্পনায় ছিল?
“চেস্টার বেনিংটন” তোমার শুধু শরীরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তুমি চিরদিন বেঁচে থাকবে ভক্তের হৃদয়ে, বেঁচে থাকবে তোমার গানের কথা আর সুরে। আর তোমাকে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ করতে হবে না। যেখানে আছো ভালো থেকো। আর কোন কষ্ট যেন তোমাকে ছুঁতে না পারে। আত্মহত্যা নামক যে ভয়ঙ্কর কাজ তুমি করেছ তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ক্ষমা করুন সেই প্রার্থনা করি।
চেস্টারের একটা শখ আছে। মোটে একটাই শখ বেচারার। সেটা হল নতুন জুতা। এটার ভেতরেই আনন্দ খুঁজে পেত সে। কেউ নতুন জুতা উপহার দিলে অনেক খুশি হত।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। আমার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া একমাত্র ছোট বোনের জন্মদিন ছিল ২০ জুলাই। ও তোমার মস্ত বড় ভক্ত। এই তারিখটাকে অনেক বেশি মূল্যবান করে ফেলেছ তুমি। ভালো থেকো বন্ধু। যত দিন রক গান থাকবে এই পৃথিবীতে তার চেয়েও বেশি দিন মনে পড়বে তোমার কথা।
I am only commenting to let you know of the remarkable experience our girl encountered reading the blog. She noticed many pieces, which included how it is like to possess an amazing giving nature to get certain people really easily learn certain multifaceted things. You undoubtedly exceeded visitors’ desires. I appreciate you for rendering the important, healthy, informative as well as easy tips about the topic to Kate.
I ran into this page accidentally, surprisingly, this is a great website. The site owner has done a great job writing/collecting articles to post, the info here is really insightful. You just secured yourself a guarenteed reader.
Hello i am kavin, its my first time to commenting anywhere, when i read this piece of
writing i thought i could also make comment due to this sensible article.
I’ve been surfing online more than three hours today, yet I never found any
interesting article like yours. It’s pretty worth enough for me.
In my opinion, if all webmasters and bloggers made
good content as you did, the net will be a lot more useful than ever before.