সত্যি কি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উচ্চতা বাড়ানো যায়?

আসলেই কি সত্যি মানুষ খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু শারীরিক পরিশ্রম দ্বারা উচ্চতা বৃদ্ধি করতে পারে?

জিনতত্ত্বের উপর বিশ্বাস করে আমরা বেশিরভাগ মানুষ ভেবে থাকি যে আমদের উচ্চতা বৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমাদের বাবা মায়ের জিন এর উপর। অর্থাৎ আমরা জিনগত ভাবে ঠিক যতটুকু লম্বা হতে পারবো, তার থেকে বেড়ে উঠা হয়তো সম্বভ নয়। তবে বৈজ্ঞানিক ভাবে  প্রমানিত যে আমাদের বৃদ্ধির ৮০% নির্ভর করে আমাদের বাবা মায়ের জিন উপর। আর বাকি ২০% ই  আমাদের উপর বা অন্যান্য কিছু কৌশল বা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। তাহলে দাঁড়ায় যে যদি একজন ব্যক্তির উচ্চতা হয় ৫ফুট তাহলে তার উচ্চতা ২০% করলে হয় ১ফুট আর এর থেকে পরিবেশ গত ভাবে ৬ ইঞ্চি ধরলেও আরও ৬ ইঞ্চি নিজে বাড়ার জন্য থেকে যায়।

প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায়?

খাদ্যাভ্যাস

পর্যাপ্ত পরিমাণ চর্বিহীন প্রোটিন খাবার খান। চর্বিহীন প্রোটিন খাবার বলতে মুরগীর মাংস, মাছ, দুধ এই ধরনের খাবার খান। এগুলো আপনার পেশীর বৃদ্ধি এবং হাড়ের সঠিক বিকাশে সাহায্য করবে। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান। দুধ, দই, সবুজ শাকসবজীতে আপনি ক্যালসিয়াম পাবেন। প্রচুর পরিমাণে জিংক খেতে হবে। জিংক পাওয়া যায় কুমড়া, ওয়েস্টার, গম ও চিনাবাদামে। দুপুরে খাবার সময়ে অর্ধেকটা আভাকাডো দেহে বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। মটরশুটি,  ছোলা,  মসূর এই ধরনের খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,  ফাইবার,  অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন বি এবং আয়রন রয়েছে যেগুলো শরীরের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে লম্বা হতেও সাহায্য করে।

কোন ধরনের মাদক গ্রহণ করলে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি কমে যাবে।

শরীর চর্চা ও যোগ ব্যায়াম

প্রথমে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়ান। এভাবে দাড়িয়ে  নিজেকে দেয়ালের সমান্তরালে সোজা রাখবার চেষ্টা করুন। সেই সাথে চেষ্টা করতে  হবে,  আপনার শরীরের পেছন দিকটির পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত যেন দেয়াল স্পর্শ করতে পারে। এভাবে দেয়াল স্পর্শ করে সোজা হয়ে স্ট্রেচ করার চেষ্টা করুন। এভারে ৮ থেকে ১০ বার করুন ব্যায়ামটি।

দড়ি লাফ দিবেন ২০ টি করে প্রতিদিন, আস্তে আস্তে দড়ি লাফের পরিমাণ বাড়াবেন।

রিং এ ঝুলুন যদি পারেন, সাইকেলিং করলে খুব জলদি উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আপনি দৈনিক সাইকেল চালিয়ে ২-৩ ইঞ্চি বাড়াতে পারবেন।

সাঁতার হল উচ্চতা বৃদ্ধির আদর্শ ব্যায়াম, কেউ যদি দৈনিক সাঁতার কাটে তার উচ্চতা বৃদ্ধি সাধারণের এর চেয়ে ১০ গুণ বেড়ে যায়।

এভাবে সপ্তাহে ৩ দিন করে নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এগুলো মূলত স্ট্রেচিং ব্যায়াম যা আপনার শরীরের আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। শরীরের আড়ষ্টভাব কেটে গেলে উচ্চতা বাড়তে শুরু করে।

কিছু যোগ ব্যায়াম

ভুজঙ্গাসন (কোবরা পোজ)

উচ্চতা বৃদ্ধি
ভুজঙ্গাসন (কোবরা পোজ  )

উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে মাথা তুলে যে ভুজঙ্গাসন করা হয় তাতে বুক, পেট ও কাঁধের পেশীতে টান পড়ে। এই আসন লম্বা হতে সাহায্য করে।

তাড়াসন (ট্রি পোজ)

উচ্চতা বৃদ্ধি
এই যোগব্যায়ামটি আপনাকে উচ্চতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে

গাছের মতো ভঙ্গি মেরুদন্ডকে সোজা করে, শরীরকে টান টান করে। এই আসন লম্বা হবার জন্য খুব উপযোগী।

নটরাজাসন (শুয়ে শরীরকে মোড়া)

উচ্চতা বৃদ্ধি
নটরাজাসন

শুয়ে পড়ে শরীরকে মোচড় দেওয়া এই আসন পা, পায়ের পেশী, হাত, কবজি, মেরুদন্ড সব কিছুকে টানটান করে, বুকের পেশীকেও লম্বা করে টেনে ধরে, এই আসনও শরীরকে লম্বা করে।

সূর্য নমস্কার (সান স্যালুটেসন)

উচ্চতা বৃদ্ধি
সূর্যাসন উচ্চতা বাড়ানোর জন্য অনেক উপকারী একটি যোগাসন

সূর্য নমস্কার আসন খুব তাড়াতাড়ি শরীরের সব সন্ধিস্হলগুলিকে জড়তা মুক্ত করে, সহজ করে, পেটের ভেতরের যন্ত্রপাতিকে একবার টেনে ধরে, একবার ছেড়ে দিয়ে  প্রসারিত ও সঙ্কুচিত করে সবল করে তোলে, প্রাণবন্ত করে তোলে। বার বার সামনে ও পিছনে ঝোঁকার ফলে পিঠ ও মেরুদন্ড সুস্থ থাকে, আরো বেশী স্বাস্হ্যবান হয়ে ওঠে। এই ব্যায়ামে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে টান পড়ে বলে এটি শরীরকে লম্বা করে। এই ব্যায়াম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

ঘুম

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান প্রতিদিন। ঘুমের সময় শরীর বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীর লম্বা হওয়ার মতো সময় পায়। কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমান যদি আপনার বয়স ২০ এর কম হয়। শরীরের হরমোন গভীর ঘুমের সময় উৎপন্ন হয়। পিটুইটারী গ্লান্ড থেকে গ্রোথ হরমোন বের হতে সাহায্য করে।

সব তো করলাম তারপরও ফল পাইনা কেন?

খেয়াল রাখবেন যে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম করলে দ্রুত উচ্চতা বাড়বে তা যদি ভেবে থাকেন তবে ভুল করবেন। বরং অতিরিক্ত ব্যায়াম অনেক সময় উচ্চতার বৃদ্ধি রোধ করে দেয়। তবে শুধু  ব্যায়াম করলেই হবেনা। সুষম খাদ্যও গ্রহন করতে হবে। সেই সাথে জীবনযাত্রায় আনতে হবে পজিটিভ মনোভাব।

 

 

Leave a Comment