শীতকালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনার সাবধানতা। এসময় অনেক কাপড় পরে বের হলে আপনার গরমও লাগতে পারে।
আবার ভাবলেন একদিন শীত কম পড়বে, কিন্তু দেখলেন ওই দিনেই বেশি শীত পড়েছে। তাই শীতকালে সাবধান থাকা জরুরি।
বাইরে বের হওয়ার আগে আবহাওয়ার খবর জেনে নিন। কাপড় ভেজা থাকলে শরীরে অনেক তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা লেগে যায়।
খেয়াল রাখবেন আপনার পরিধেয় কাপড়টি যেন শুষ্ক থাকে। এর মাধ্যমে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শীতকালের ঠাণ্ডাজনিত রোগ
ঋতু পরিবর্তনের জন্য শীতের সময় নানা ধরণের রোগ দেখা যায়। বেশির ভাগই ঠাণ্ডাজনিত রোগ। এক্তু সাবধান থাকলেই এই সব রোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
শীতের রোগগুলো সাধারণত ভাইরাস ও এলার্জিজনিত কারণে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও কিছু রোগ হতে পারে।
যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ জীবাণু, তবু পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।
শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে, যা শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কাজ ব্যাঘাত করে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরো সমস্যা হচ্ছে, দায়ী জীবাণুগুলো ধুলোবালি, আক্রান্তের হাঁচি-কাশি অথবা দৈনন্দিন খাবার বা ব্যবহার্য জিনিস থেকে শুষ্ক আবহাওয়ায় খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হাঁপানি
শীতকালে বাড়ে হাঁপানির প্রকোপ। এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোতে বিশেষত শরৎ, বসন্ত ও শীতকালে বাতাসে অসংখ্য ফুলের বা ঘাসের রেণু ভেসে বেড়ায়, যা হাঁপানির উত্তেজক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
আর্থ্রাইটিস
সর্দি-কাশি ফ্লুর মতো এতটা প্রকট না হলেও আরো অনেক রোগেরই তীব্রতা বাড়ে শীতকালে। বিশেষত আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা শীতে বেশি বাড়ে।
চর্মরোগ
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। ফলে অনেকের ঠোঁট, হাত-পায়ের নখ, ত্বক শুষ্ক ও দুর্বল হয়ে ফেটে যায়।
পরবর্তীকালে খোশপাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগ দেখা দেয়। খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়।
হাইপোথার্মিয়া
তীব্র শীতে অনেকের হাতের আঙুল নীল হয়ে যায়। শীত প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে গিয়ে (হাইপোথার্মিয়া) মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
শীতকালে অবশ্যই যা খেয়াল রাখতে হবে
অ্যালার্জির ধাত থাকলে যাতে সমস্যা বাড়ে তা থেকে দূরে রাখুন বাচ্চাকে৷
সাধারণত ধুলো, ধোঁয়া, মশার কয়েল, বিছানা বা কার্পেটের ধুলো, ফুলের রেণু, কুকুর-বেড়ালের রোম, ঠাণ্ডা জল ইত্যাদিতে সমস্যা হতে পারে৷
স্কুলে বা বাড়িতে কারও হাঁচি-সর্দি-জ্বর হলে বাচ্চাকে তার কাছে যেতে দেবেন না৷ বিশেষ করে সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই যদি বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হওয়ার ধাত থাকে৷
রাত্রে ঘরের জানালা বন্ধ করে গায়ে ঢাকা দিয়ে ঘুম পাড়ান৷
ঠান্ডা জলে স্নান করাবেন না৷ বিশেষ করে নাকে যেন ঠান্ডা জল না ঢোকে৷ গা এবং মাথা আলাদা করে ধুয়ে নিলে ভালো৷
ঠান্ডা কিছু খাওয়াবেন না এ সময়৷
শীতের শুরু থেকে টক ফল ও শাক-সবজি বেশি করে খাওয়ান৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে বাচ্চার৷
চিকিত্সা
নাক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন৷ ২৫০ মিলি পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে নরমাল স্যালাইন দ্রবণ তৈরি করুন৷ কাপড় বা তুলো দিয়ে পলতে পাকিয়ে এতে ভিজিয়ে নাক পরিষ্কার করুন৷
দু-এক ফোঁটা ড্রপও দিতে পারেন৷
কাজ না হলে ও খুব বেশি সর্দি হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ডিকনজেস্টেন্ট ড্রপ দিন দু-এক ফোঁটা৷
তারপরও নাক বন্ধ থাকলে শোওয়ার সময় মাথার দিকটা একটু উঁচু করে রাখুন৷
বাড়াবাড়ি সর্দিতে ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিহিস্টামিনিক ড্রপ খাওয়াতে হতে পারে৷
জ্বর, গা-হাত-পা-মাথা ব্যথা থাকলে খাওয়ান প্যারাসিটামল৷
ভাইরাল ইনফেকশন সচরাচর ৭ দিনে পুরোপুরি সেরে যায়৷ তবে সাবধানে না থাকলে একই সিজনে আরও দু-একবার হতে পারে৷
সমস্যা ২-৩ দিনে কমার বদলে বাড়তে থাকলে, কফ গাঢ় হয়ে হলুদ বা সবুজ রং ধরলে বুঝতে হবে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়েছে৷ তখন অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে৷
কান ব্যথা হলেও অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে৷
হাঁচি-সর্দি-নাকবন্ধ লেগে থাকলে স্টেরয়েড ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করতে হতে পারে৷
জ্বর-সর্দি হলেই যদি শ্বাসকষ্ট হয়, ইনহেলার নিতে হবে৷ তবে চিন্তা করবেন না, এতে কোনও ক্ষতি হবে না বাচ্চার৷
1 thought on “শীতকালে সাবধান না হলে হতে পারে নানান অসুখ।”