সুস্থ থাকার জন্য কি ঘুম সত্যি অপরিহার্য??

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের জন্য অপরিহার্য কি? হয়ত ভাবছেন খাদ্য, শিক্ষা,কিংবা স্বাস্থ্য? কিন্তু শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য ঘুম অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত না ঘুমালে  আমাদের অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন হজমে সমস্যা, শারীরিক সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, গাড়ি চালনায় সমস্যা, রোগের সম্ভাবনা, জেনেটিক গণ্ডগোল।

Medichin

হার্ট, লিভার, কিডনি, ব্রেইন, ফুসফুস মানব দেহের এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা যদি খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে একটি সুক্ষ্ম  সফটওয়ার এর মত  স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো বিরামহীন ভাবে চলছে। তাই মানব দেহের সকল অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলো  যথাযথ ভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন নিয়তিম ঘুম। একজন মানুষকে তার দেহ, মন, মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প কিছু নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেন, তারা  কাজের প্রতি বেশী মনোযোগী, কাজ খুব নিখুঁত ভাবে সম্পাদন করতে পারেন, মানসিক ও শারীরিক সমস্যা অনেক কম হয়।

brain
ঠিক মতো ঘুম না হলে যেসব সমস্যা হতে পারে

পরিমিত ঘুম না হলে আমাদের অনেক সমস্যা দেখা দেয় যেমন স্মৃতি শক্তি লোপ পায় মনোযোগ ব্যাহত হয়ে থাকে। এ গুলো ছাড়াও যেমন আমাদের ব্যবহার খিটখিটে হয়ে যায়, কাজ কর্মের প্রতি অনীহা চলে আসে, ক্ষুধা মন্দা হয়ে যায়, সবকিছুতে বিতৃষ্ণা দেখা দেয়। ঘুম মানব দেহের  ইমিউন সিস্টেম বা অনাক্রম্যতার সাথে অনেকাংশে  জড়িত যা শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের দেহের বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তু যেমন  নিউরোট্রান্সমিটারের অধিক পরিবর্তন হয়ে থাকে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে।  ঘুমের সময় কিছু হরমোন নিঃসৃ্ত হয়ে থাকে যা আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও মেটাবলিজমে সহায়তা করে থাকে যেমন – বৃদ্ধি হরমোন বা গ্রোথ হরমোন, থাইরয়েড হরমোন।

নিয়মিত ঘুম কেনো প্রয়োজন
ঘুম মানুষের দেহের শক্তি বৃদ্ধির কাজ করে থাকে। অর্থাৎ ঘুম আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি কে দূর করে আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রিত করে। ঠিক মত ঘুম না হলে চোখের নিচে কালো ছাপ পরে, চুল ঝড়তে শুরু করে, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে অনেক বাহ্যিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই গুলো এড়াতে আমাদের নিয়মিত ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমাদের দেহের স্নায়ুগুলো অনেক বেশী সক্রিয় অবস্থায় থাকে। সারাদিন যে সমস্ত কাজ করি অথবা আমরা যা কিছু শিখে থাকি সে গুলো সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি ঘুমের সময় বেশী হয়ে থাকে। আমাদের স্মৃতি শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নিয়মিত ও পরিমাণ মত ঘুম অনেক দরকার।
ঘুমের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে, ওজন বেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য কোনভাবেই ঠিক নয়।

নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরের হরমোন নিঃসরণ  ঠিকভাবে  হয় না এর ফলে আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক দিন ঘুম ঠিক মত না হলে হাইপারটেনশন এর সৃষ্টি হয় যার ফলে দেহে অকারণে উদ্ধিগ্নতার সৃষ্টি করে। যা বেড়ে গিয়ে আমাদের হৃদরোগের সমস্যার কারণ হয়ে থাকে। ঘুমের অভাবে আমাদের শারীরিক অনেক প্রক্রিয়া তরান্বিত করে আর এসব প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ্য হলে আমাদের শরীরের কোষ গুলো নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকি তখন দেহের কোষ গুলো সক্রিয় হয়। শারীরিক দুর্বলতা সারিয়ে তোলার প্রক্রিয়াটি নিয়মিত ও ভালো ঘুমের উপর  নির্ভর করে।

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, শারীরিক বিপর্যয়, আয়ু কমে যাওয়া, শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, দৃষ্টি শক্তি জনিত সমস্যা, মাইগ্রেনের সমস্যা হৃদরোগ জনিত সমস্যা এসব থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম বজায় রাখুন।

time

পরিশেষে এটা বলা যায় সময় মত ঘুমাতে হবে, না অনেক রাত জেগে সকালে, না অনেক আগে যেমন সন্ধ্যায়। সঠিক সময় ঘুমালে সঠিক সময় উঠা যায়।
শেষ করছি কবি নজরুল এর কবিতা দিয়ে-

আমি হব সকাল বেলার পাখি

সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি।“

Leave a Comment