আমরা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডাক্তারের কাছে যেতে হয় শরীর সুস্থ করতে। অনেকে আছে ৬ মাস পর পর স্বাস্থ্য চেক আপ করতে যান ডাক্তারের কাছে। কিন্তু আমরা আমাদের শরীরের একটি অঙ্গ নিয়ে কখনই চিন্তা করি না। সেটা হল দাঁত। যখন দাঁত থেকে রক্ত পড়ে অথবা ব্যথায় গাল ফুলে যায় তখন আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। দাঁতের সমস্যা দূর করতে অনেকে বাসায় চেষ্টা করেন। শরীরের এই বিশেষ অঙ্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কি করণীয় তা নিয়ে কথা হবে।
আয়নার সামনে গিয়ে ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটি অন করুন। এখন মুখ হা করে লাইট দিয়ে ভালো করে দুই পাটি দাঁত দেখুন। নিচে কয়েকটি সমস্যার কথা বলা হল মিলিয়ে দেখুন। সাথে পাবেন সমস্যার সমাধান।
১) আপনার দাঁতের গোঁড়ায় সাদা, হলুদ, কালো অথবা খয়েরী রঙের আবরণ দেখেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার দাঁতে প্লাগ হয়েছে। যা আপনার মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
যদি প্লাগ অনেক বেশী হয় তাহলে আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট আপনাকে স্কেলিং করতে বলতে পারে। স্কেলিং করতে বেশী খরচ হয় না।
তবে এটা আপনার দাঁতের গঠন ও প্লাগের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। আর যদি প্লাগের পরিমাণ কম হয় তাহলে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন প্লাগ সরাতে পারেন। তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই বেশী ভালো। এখন আসুন জেনে নেই ঘরে বসে কীভাবে প্লাগ দূর করবেন।
প্লাগ দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি- পরিমাণ মত বেকিং সোডা, লবণ আর প্রতিদিন ব্যাবহারকৃত পেস্ট একসাথে মিশিয়ে তা ব্রাশ দিয়ে দাঁতের প্রতিটি মাড়িতে ভালো করে মাজতে হবে।
গোঁড়া গুলোতে ভালো করে মাজতে হবে। ৩-৪ দিন পর পর এভাবে মাজলে দাঁতের প্লাগ দূর হয়ে যাবে।
২) আপনার দাঁতে যদি কালো কালো দাগ দেখেন এবং তা যদি ব্রাশ করার পরেও না যায় তাহলে বুঝতে হবে সেই জায়গায় ক্ষয় হচ্ছে। যাকে ক্যারিজ বলে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে দাঁতের ক্ষয় বা ক্যারিজ রোধ করা গেলেও তা আর আগের মত সারানো যায় না।
কিন্তু সচেতন আপনি যদি সচেতন না হন তাহলে দাঁতের ক্ষয় হতে হতে তা অনেক ভেতরে চলে যায়। তখন দাঁতের রুট ক্যানেল করতে হয়। যা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল অন্যদিকে অনেক কষ্টকর। দাঁতের এই কালো দাগ গুলো দেখলেই অতিসত্বর ডেন্টিস্ট এর কাছে যান। সঠিক সময় গেলে হয়তো শুধু ফিলিং করলেই দাঁতটা ভালো হয়ে যেতে পারে।
ফিলিং হচ্ছে দাঁত ক্ষয় অথবা ভেঙ্গে গেলে দাঁতের সমতা আনানো। এই ক্ষেত্রে গাটা পার্চা দিয়ে দাঁতের ক্ষয় হয়ে যাওয়া অংশ ফিলিং করে দেয়। আর রুট ক্যানেল এ দাঁতের মধ্যে থাকা নষ্ট হয়ে যাওয়া পাল্পকে বের করে আনা হয় বিশেষ রকমের কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে। এটি ব্রচ নামে পরিচিত।
এরপর দাঁতের পাল্প চেম্বার ও দাঁতের রুটের ভেতরে থাকা ক্যানাল বা ক্যানালগুলো পরিষ্কার করতে হয় রিমার, ফাইল- এগুলোর সাহায্যে। এরপর পরিষ্কার করা ও জীবাণুমুক্ত করা রুট ক্যানাল সিল করে দেওয়া হয় গাটা পার্চা দিয়ে। আর সঙ্গে সিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয় বহু ধরনের সিলার। যেমন ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড সমৃদ্ধ সিলার, রেসিন বেসড এএইচ, জিংক অক্সাইড ইউজেনল ইত্যাদি।
এমনভাবে সিল করতে হয়, যাঁতে পরে দাঁতের বাইরে থেকে বা ভেতর থেকে কিছুতেই জীবাণু রুট ক্যানালে ঢুকতে না পারে। এরপর ফিলিং দিয়ে দাঁতের গর্ত ভরাট করে দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রুট ক্যানাল করা দাঁতটিতে কৃত্রিম ক্রাউন বা ক্যাপ বসাতে হয়।
৩) আপনার দাঁত অনেক উঁচুনিচু হলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ময়লা আপনার চোখে পড়বে না। সেই ক্ষেত্রে ভালো মানের ব্রাশ ব্যাবহার করতে হবে এবং প্রতিবার খাবারের পরে কুলি করতে হবে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত সমান্তরাল করতে পারেন অথবা অতিরিক্ত দাঁত ফেলে দিতে পারেন।
দাঁত রক্ষা করার কিছু পদ্ধতি জেনে নিন-
ক) প্রতিদিন সকালে খাবারের পর ও রাতে খাওয়ার পর (ঘুমানোর আগে) ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।
খ) খাবার পানি ফুটিয়ে পান করা উচিত। ফুটানো সম্ভব নাহলে নলকূপের পানি সংগ্রহ করুন।
গ) ব্রাশের সমান্তরাল স্টিকের পরিবর্তে বাঁকা হওয়া দরকার। এতের মুখের ভেতরের দাঁতগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
ঘ) দাঁতের ফাঁকের ময়লাগুলো দীর্ঘদিন ধরে জমে ক্ষুদ্র পাথর কণায় পরিণত হয়। তখন দাঁতের উপরিভাগে কালো দাগ পড়ে। এটা ভীষণ দৃষ্টিকটু দেখায়। এ জন্য প্রতি ছয় মাস পরপর দাঁতের স্কেলিং করানো উচিত। বয়স ৪০-এর উর্ধ্বে হলে এক বছর পরপর করাতে হবে। নতুবা স্কেলিংয়ে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক যন্ত্রের ফলে দাঁতের গোড়া দূর্বল হয়ে যাবে। কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের মাড়িও ক্ষয় হতে থাকে।
ঙ) অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানীয় দাঁতের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। দুটো পানীয় একই সঙ্গে গ্রহণ করা অনুচিত। খুব গরম চা বা কফি পানের অন্তত ১ ঘন্টা পরে স্বাভাবিক পানি পান করুন।
চ) গ্যাসট্রিকের সমস্যা থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। ফলে দাঁতের হলুদাভ আবরণ আসে। নিয়মিত গ্যাসট্রিকে ঠোঁটের দুই কোণে কালো হয়ে যায়। এ জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।
ছ) পান, সুপারি, জর্দা বা গুল পরিহার করুন। এসবে আসক্তি থাকলে খাবার পরে দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন। পানে চুনের পরিমাণ যত কম হয় ততই ভালো। মাত্রাতিরিক্ত চুন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।
জ) প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা ভিটামিন-সি ট্যাবলেট খান।
ঝ) অনেকেই বিভিন্ন গাছের দাঁতন ব্যবহার করে থাকেন। এতে মনোযোগী হতে হবে যেন দাঁতনের আঁশ দাঁতের দাঁতের গোড়ায় আটকে না থাকে। টুথপিক ব্যবহারে মাড়িতে ফুটো হলে ইনফেকশন হয়। তাই সতর্কতার সঙ্গে টুথপিক ব্যবহার করুন।
ঞ) প্রতি ৪-৫ মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করুন।
ট) জিকজ্যাক পদ্ধতিতে (উপরে, নিচে, ভেতরে, বাইরে) দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
ঠ) বাঁধানো দাঁত বা কৃত্রিম দাঁতের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। প্রায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো খুলে পরিষ্কার করুন।
বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেক আপ করান।
এতে লুকায়িত কোন রোগ জীবাণু থাকলে ধরা পড়বে। দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
তাই সুস্থ্য দাঁত ও সুস্থ্য দেহের জন্য পুরো দেহ রোগমুক্ত থাকাটা ভীষণ জরুরী।